অস্ত্রের মুখে গণধর্ষণ: প্রতিবেদন দাখিল ২৯ মে

নিউজ ডেস্ক.

রাজধানীর বিষয়টি ধর্ষণ না হয়ে আপসেও হতে পারে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। আজ রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিম দোলোয়ার হোসেন এ দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে এসে বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ধর্ষণের শিকার ওই দুই ছাত্রী গত শনিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন।
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, ৪০ দিন আগে ধর্ষণের শিকার ওই দুই ছাত্রী বিপর্যস্ত ছিলেন। মামলা করলে কিংবা আইনের আশ্রয় নিলে ও পুলিশ-র‌্যাবকে জানালে তাদের হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। যে কারণে মামলা করতে সাহস পাননি বলে জানিয়েছেন তারা।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় মামলা দায়ের করেন ওই দুই ছাত্রী। মামলার আসামিরা হলেন- সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিব, সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী সাকিফ।
তরুণীদের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সাদমান সফিক তাদের পূর্ব পরিচিত। প্রায় দুই বছর থেকে তার সঙ্গে পরিচয় রয়েছে। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে গুলশান-২ নম্বরের ৬২ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। এরপর জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে গত ২৮ মার্চ সাফাত আহমেদ তার গাড়ি পাঠিয়ে ড্রাইভার ও বডিগার্ডের মাধ্যমে তরুণীদের বাসা থেকে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, সেখানে অনেক লোক থাকবে এবং অনুষ্ঠানটি হবে হোটেলের ছাদে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর কোনও ভদ্র লোককে আমরা দেখতে পাইনি। সাফাত, নাঈম ও সফিক ছাড়াও সেখানে আরও দু’জন মেয়ে ছিল। তাদের ওই হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পর আগে থেকে সেখানে থাকা অন্য দু’টো মেয়েকে সাফাত ও নাঈম বার বার নিচে নিয়ে যাচ্ছিল। সেখানকার পরিবেশ ভালো না লাগায় আমরা চলে যেতে চাচ্ছিলাম।
এজাহারে আরও বলা হয়, এক পর্যায়ে তাদের দু’জনকে একটি কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক মদ্যপান করিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এ সময় সাফাত তার ড্রাইভার বিল্লালকে ধর্ষণের ভিডিও করতে নির্দেশ দেয়। তখন ড্রাইভার বিল্লাল ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে। পরবর্তীতে সাফাত তার দেহরক্ষীকে তরুণীদের বাসায় পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ও ভয়ভীতি দেখায়। তাদের হুমকি ও লোকলজ্জার ভয়ে এক পর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। যে কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
মামলার পর ওই শিক্ষার্থীদের পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়েছে জানিয়ে আব্দুল মতিন বলেন, এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।
আব্দুল মতিন বলেন, মামলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের এডিসি আব্দুল আহাদ বলেন, ‘ধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনও কোনও আসামি ধরা পড়েনি।’ রেইনট্রি হোটেলের ওই দিনকার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হোটেল কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ একমাসের ফুটেজ সংরক্ষণ করে থাকে। তাই ধর্ষণের ঘটনার কোনও ফুটেজ পাওয়া যায়নি।’
রেইনট্রি হোটেলের এক কর্মকর্তা নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, তাদের একটা কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল ধর্ষকদের ওই গ্রুপটি। এর বাইরে আর কোনও কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, যা বলার পুলিশকেই বলব।
মামলা দায়েরের পর শনিবার রাতেই দুই তরুণীকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখান থেকে আজ রবিবার দুপুরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হয়। এরআগে তরুণীদের ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. মমতাজ আরা, ডা. নিলুফার ইয়াসমিন, ডা. কবিতা সাহা ও ডা. কবির সোহেল।
ধর্ষণের বিষয়ে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ভিকটিমদের মাক্রোবায়োলজি, রেডিওলজিক্যাল এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগতে পারে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের হওয়ায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া কঠিন হবে।’
বিষয়টি ধর্ষণ নয়, আপসেও হতে পারে
এদিকে, এই ঘটনায় অভিযোগ আনা দুই তরুণীর ওপর উল্টো দায় চাপালেন অভিযুক্ত আসামিদের একজন সাফাত আহমেদের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ।
তিনি দাবি করেছেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার ছেলের সঙ্গে এমন কাজ করেছেন ছেলের সাবেক স্ত্রী।
ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে দিলদার আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলের (সাফাত) সঙ্গে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকার বিয়ে হয়। তবে আমি সেই বিয়ে মেনে নেইনি। বিয়ের পর সেই মেয়ের নানা ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য দেখে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়।’
‘সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তাদের (ধর্ষণের অভিযোগকারী দুই তরুণী) দিয়ে এমনটি করিয়েছে। কারণ মামলা করার জন্য ওই মেয়েই দুই তরুণীকে থানায় নিয়ে যায়’- অভিযোগ সাফাতের বাবার।
ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেই রাতে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা আপসেও হতে পারে। ধর্ষণ হলে নিশ্চয়ই ৪০ দিন মামলা করার জন্য অপেক্ষা করতো না তারা।’
পুলিশের রিপোর্ট পেলে দুই তরুণীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলার হুমকিও দেন দিলদার আহমেদ।
আসামিদের ধরিয়ে দিতে ফেসবুকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্ট্যাটাস
অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা যারা সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, বিল্লাল হোসেন, সাদনান ও সাকিফকে চেনেন, তারা দয়া করে বনানী থানায় বিস্তারিত জানান এবং ছবি প্রকাশ করুন। যেন অন্য কেউ তাদের খোঁজ দিতে পারে। তাদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই ছাত্রীর বন্ধু বলে পরিদর্শক মতিন জানান। এরাই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন দুই ছাত্রী।’

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ