আজ ধুনটের গণহত্যা দিবস

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ.


আজ ৪ নভেম্বর, বগুড়ার ধুনট উপজেলার শোকাবহ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনীর সদস্যরা ধুনট উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯জন নিরহ বাঙালীকে হত্যা করে। পরে গণহত্যার শিকার ২৯জন ব্যক্তির মৃতদেহ ধুনট পৌর এলাকার পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামে দু’টি কবরে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। যা বর্তমানে গণকবর হিসেবে পরিচিত।

এলাকাবাসী, গণহত্যায় নিহতদের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর রাজাকারদের সহযোগীতায় পাকসেনারা ধুনট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানকালে তারা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী ও নিরস্ত্র নিরহ বাঙালীদের আটক করে। ধুনট থানা ভবনে ওই সময় পাক বাহিনীর ক্যাম্প ছিলো। ওই ক্যাম্পে আটক ২৮জনকে নির্মম নির্যাতন করে পাক সেনারা। কিন্তু নির্যাতন করেই খ্যান্ত হয়নি তারা। ওই রাতেই আটককৃত বাঙালীদের সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে থানা ভবনের ২০০গজ পূর্ব দিকে বর্তমানে জেল হোসেনের চাতালের পাশে রাজাকারদের সহযোগীতায় দুটি গর্ত করে মৃতদেহ গুলো পুতে রাখা হয়। বর্তমানে সেখানে দুটি কবর রয়েছে, যা গণকবর হিসেবে পরিচিত।

দু’টি গণকবরে ২৮জনকে শায়িত থাকলেও পরিচয় রয়েছে মাত্র ৭জনের। তাঁরা হলেন, ভরনশাহী গ্রামের জহির উদ্দিন, কান্তনগর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান, মাজবাড়ি গ্রামের একই পরিবারের দুই ভাই জিল্লুর রহমান, ফরহাদ আলী ও পর্বত আলী, চাঁন্দার পাড়ার গ্রামের আব্দুল লতিফ, শিয়ালী গ্রামের নরুল ইসলাম। এছাড়া স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অপর ২১জনের পরিচয় মেলেনি।

গণহত্যা শিকার জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আলেফা বেওয়া ধুনট বার্তাকে বলেন বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমার স্বামী বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু তাঁর বাড়ির আসার খবর পেয়ে রাজাকাররা পাকসেনাদের খবর দেয়। এরপর পাকসেনারা এসে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ধুনট বার্তাকে আলেফা বেওয়া বলেন, তখন চারদিকে পাকসেনাদের আতংক। নিরহ বাঙালীরা নিরাপদ ছিলো না। ওই সময় স্বামীর মৃতদেহ আনার মত মানুষ পর্যন্ত পাইনি।

আলেফা বেওয়া বলেন, শুধু ওই সময় নয়, স্বামীর মৃত্যুর পর শিশু সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটিয়েছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কেউ খোঁজ নেননি।

‘কার কাছে বিচার চাইবো’ -এমন প্রশ্ন তুলে আলেফা বেওয়া বলেন, রাজাকারদের অনেকে মারা গেছে, আবার অনেকে বেঁচে আছে। তবে আমি আমার স্বামীকে হত্যার বিচার চাই।

আলেফা বেওয়ার মেয়ে লাকী আকতার ধুনট বার্তাকে বলেন, ৬ মাসের শিশু থাকা অবস্থায় বাবাকে হারিয়েছি। বাবার স্নেহ ভালবাসা পাবার সুযোগ হয়নি। তবে আমি তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই। শহীদ পিতার সন্তান হিসেবে গর্ব করে বাঁচতে চাই।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রেজাউল হক মিন্টু ধুনট বার্তাকে বলেন, গণকবরে শায়িত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক। তাঁদের মধ্যে অনেকে মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে আমি এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার প্রার্থনা করি।

ধুনট উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত ধুনট বার্তাকে বলেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে হলেও এবার ধুনট উপজেলা প্রশাসন গণহত্যা দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। গণহত্যার সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, গণকবরে শায়িত ব্যক্তিদের শহীদের মর্যাদা এবং তাঁদের পরিবারের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ