কতিপয় সউদি স্কুলশিক্ষিকার কঠিন জীবন

নিউজ ডেস্ক.

সউদি আরবের গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন স্কুলে এমন অনেক শিক্ষিকা কাজ করেন, যাদের বাড়ি তাঁদের কর্মস্থল থেকে অনেক দূরে। তাঁদের অনেককেই প্রতিদিন দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়। তা করতে গিয়ে অনেককে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে কিংবা পঙ্গু হতে হয়। এরকম অনেক শিক্ষিকা আছেন, যারা চোখের সামনেই সড়ক দুর্ঘটনায় সহকর্মীদের মারা যেতে দেখেছেন।
সউদি আরবের জাযান এলাকার পূর্বাঞ্চলে এমন ক’জন শিক্ষিকা আছেন, যারা কর্মস্থলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন ভোর ৩টায়, আর বাড়ি ফেরেন বিকাল ৫টায়। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে এদের অনেকেই দুর্গম এলাকায় চাকরি করতে রাজি হয়েছেন শুধুই জীবিকার তাগিদে। এই নারীদের অনেককেই প্রতিদিন বনি মালিক, ওয়াদি আল-দাফা, সুলা, আবাদিল ও ফিফা পর্বত পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়।
উম আহমেদ নামে এক শিক্ষিকা বলেন, ”প্রতিদিন আমার যাত্রা শুরু হয় ভোর ৩টায়, সঙ্গে আমার কয়েকজন সহকর্মীও থাকেন। ১৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমরা স্কুলে পৌঁছাই। স্কুলে যাওয়ার আগে আমি আমার সন্তানদের একবার দেখে নিই। কারণ, স্কুল থেকে আর ফিরতে পারবো কিনা, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।”
এই অনিশ্চয়তাবোধ উম আহমেদের একার নয়, তাঁর সহকর্মীদেরও। তিনি বলেন, ”আমার এক সহকর্মী একবার এক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান, কিন্তু চোখের সামনে আরেক সহকর্মীকে মারা যেতে দেখেন। এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কথা তিনি কোনোক্রমেই ভুলতে পারেন না। এই ঘটনা তাঁকে মানসিকভাবে খুবই ক্ষতি করে।”
শিক্ষিকা উম আহমেদ বলেন, ”আমরা জাযানের শিক্ষা বিভাগকে বলেছি, এ ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের একটি চার চাকার গাড়ি ও দু’জন ভালো ড্রাইভার দেয়া হোক।”
আরেক শিক্ষিকা নাসরিন মোহাম্মদ দু’ সন্তানের মা। সাত বছর অপেক্ষা করে এই চাকরিটা ধরতে পেরেছেন তিনি। নাসরিন বলেন, ”আমার দুর্ভোগ শুরু হয় ভোর ৩টায় এবং মাগরিবের আগে তা কখনো শেষ হয় না। আমরা ক’জন মিলে এক ড্রাইভার ঠিক করেছি আমাদের স্কুলে আনা-নেয়ার জন্য। তাকে আমরা মাসে মাথাপিছু এক হাজার রিয়াল করে দিই। কিন্তু প্রতিদিন উঁচু-নিচু, খানাখন্দ ও টিলাটক্করে ভরা পার্বত্য পথে চলা যে কী কষ্ট, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে, তা আমরাই জানি।”
ওই স্কুল থেকে তাঁকে বদলির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন নাসরিন। তিনি চান, তাঁর আবেদনটি মঞ্জুর হোক।
জেদ্দার আরেক নারী ইবতিহাল আল-ঘামদি শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জাযানের আল-শরিফ স্কুলে। নিজের দুই বাচ্চাকে আত্মীয়দের জিম্মায় রেখে তিনি প্রতিদিন কর্মস্থলে যান। মাসিক সাড়ে চার হাজার রিয়াল ভাড়ায় জাযানে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন তিনি। স্কুলে আসা-যাওয়া বাবদ দু’টি গাড়িকে প্রতি মাসে দিতে হয় আরো ১৬০০ রিয়াল। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চলে যান জেদ্দা।
উম আরিয়ামের গল্পও ইবতিহালের মতোই। স্কুলে পৌঁছার জন্য তাঁকে তিওয়াল থেকে সুলা পার্বত্য এলাকায় যেতে হয়। প্রতিদিন যেতে তিন ঘণ্টা, ফিরতে তিন ঘণ্টা – এভাবে আসা-যাওয়ায় দৈনিক ছয় ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয় ১৮০ কিলোমিটার পথ। ভোর ৩টায় বাচ্চাদেরকে ওদের দাদীর জিম্মায় বেরোন আর ফেরেন মাগরিবের আগে আগে।
হানাদির কাহিনী অবশ্য ওদের চাইতে আলাদা। এতো লম্বা পথ পেরিয়ে চাকরি করায় তিনি সন্তানদের দেখাশোনা করতে পারতেন না। ফিরতেন মাগরিবের আগে, থাকতেন ভীষণ ক্লান্ত, পরদিন ভোর ৩টায় জাগতে হবে বলে ঘুমিয়েও পড়তেন তাড়াতাড়ি। এসব নিয়ে সংসারে দেখা দেয় অশান্তি আর তা থেকে তালাক।
খালেদ আলাক্বির স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা। তিনি জানান, এই পার্বত্য পথে আসা-যাওয়ার এই কঠিন চাকরি করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী হাই ব্লাড প্রেশার ও প্রচণ্ড মাথাব্যথায় ভুগছে। সে এখন ভাবছে চাকরিটা ছেড়ে দেবে কিনা। সূত্র : সউদি গেজেট

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ