কাজীপুরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও নার্সের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন

আবদুল জলিল, কাজিপুর থেকে.

অবশেষে কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অফিসার ডাঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও নার্স জোবেদা খাতুনের হত্যা রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বাসার (মাস্টার রোলে নিয়োগকৃত) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী লাকী খাতুন (৩৮) ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে খাদ্যে বিষ প্রয়োগের কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে, তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগে আরও ২ কবিরাজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এরা হলেন, সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামের কবিরাজ আশরাফ আলী ও কাজিপুর উপজেলা টিকরাভিটা গ্রামের কবিরাজ তমসের আলী।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওহেদুজ্জামান জানান, ৩ মে সন্ধ্যায় কাজীপুর উপজেলার বেড়ী পোটল গ্রামের জহরুল ইসলামের স্ত্রী লাকি খাতুনকে আটকের পর ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে খাদ্যে বিষ প্রয়োগের কথা স্বীকার করে। এরপর ৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় লাকি খাতুন ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বিচারক তার জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, শনিবার কবিরাজ আশরাফ আলী ও তমসের আলীকে আটকের পর একই আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত প্রত্যেকের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লাকি খাতুন তার লিখিত জবানবন্দীতে জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান তার সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পক অব্যাহত রাখতে চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে সে ক্ষুব্ধ হয় এবং মনিরুজ্জামানকে উচিত শিক্ষা দেবার সুযোগ খুঁজতে থাকে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল দুপুরে কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারি আলমগীর ফেরদৌসের বাসায় অফিসের অন্যান্য সহকর্মীরা দাওয়াত খেতে যান। আর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মনিরুজ্জামান, সিনিয়র স্টাফ নার্স জোবায়দা খাতুন ও প্রধান সহকারী আলমগীর ফেরদৌসের জন্য তার অফিস সহকারীরা বাসা থেকে অফিসে খাবার নিয়ে আসে। সেই খাবার খেয়ে ওই ৩ জন অসুস্থ হলে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন রাতে প্রথমে নার্স জোবেদা খাতুন ও কিছুক্ষণ পরে ডা: মনিরুজ্জামান মারা যায়। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনেও খাদ্যে বিষক্রিয়ায় ডাক্তার ও নার্সের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা: মঞ্জুর রহমান। ওই ঘটনায় কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: ইকবাল হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ