ক্যামেরা রেখে আহত শিশুদের বাঁচাতে ছুটলেন সাংবাদিক

নিউজ ডেস্ক.

দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চলমান সিরিয়া যুদ্ধের নির্মমতার ছবি প্রায়ই বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে যায়। ২০১৫ সালে তুর্কি সমুদ্র সৈকতে আয়লান কুর্দি নামে এক শরণার্থী শিশুর উপুড় হয়ে পড়ে থাকা মরদেহের ছবি বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর গত বছর, আলেপ্পোয় বোমা হামলায় বিধ্বস্ত রক্তাক্ত শিশু ওমরান দাকনেশের অ্যাম্বুলেন্সে হতভম্ব ও নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকার ছবি নাড়া দিয়েছিল সবাইকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার পরিস্থতি বুঝিয়ে দিয়েছিল সে।
সর্বশেষ, গত সপ্তাহে সিরিয়ার অবরুদ্ধ গ্রাম থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার সময় একটি গাড়ি বহরে বোমা হামলায় ১২৬ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৬৮টিই শিশু। ওই সময় ফটোসাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আবদে আলকাদের হাবাক ঘটনাস্থলে যান। সেখানে পৌঁছে ক্যামেরা সরিয়ে রেখে হতাহতদের সাহায্যে এগিয়ে যান।
হয়তো ওই হামলার কিছু ছবি তুলতে পারলে হাবাক বেশ জনপ্রিয় হতেন। কিন্তু তখন ছবি তোলার চেয়ে আহত শিশুদের উদ্ধার করাটাই তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। তার সেই উদ্ধার তৎপরতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ওই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে হাবাক সিএনএনকে জানান, ‘অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দৃশ্য ছিল সেটি। আমার পাশেই শিশুরা হাহাকার করছে, মারা যাচ্ছে। তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছেই ক্যামেরা একপাশে সরিয়ে রেখে আহতদের উদ্ধার শুরু করি।’
হাবাক বলেন, ‘ঘটনাস্থলে একটি শিশুটিকে উল্টে দেখি সে মারা গেছে। এরপর আরেকজনের কাছে ছুটে যাই। দূর থেকে কেউ একজন চিৎকার করে বলছিল- ওই শিশুটিও মারা গেছে। কিন্তু ছেলেটি তখনো বেঁচে ছিল।’ এরপর হাবাক তাকে নিরাপদ স্থানে নেয়ার জন্য ছুটতে থাকেন। আর ওই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও তার ক্যামেরা অন ছিল। সেই সঙ্গে পুরো ঘটনা রেকর্ডিং হচ্ছিল।
শিশুটি শক্ত করে হাবাকের হাতটা ধরে মুখের দিকে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল। শিশুটিকে কোলে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে ছুটে যান তিনি। সেই ছবি তুলেছিলেন আরেক ফটোসাংবাদিক মুহাম্মদ আল-রাগেব।
হাবাক জানান, তিনি যে শিশুটিকে আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়েছেন, তার বয়স ছয় বা সাত। কিন্তু তিনি জানেন না, শিশুটি আদৌ বেঁচে আছে কিনা।
এরপর হাবাক আবার আহত শিশুদের উদ্ধারে ছুটে যান। একটি শিশুর কাছে গিয়ে দেখেন সে মৃত। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশ দেখে হাবাক খুব ভেঙে পড়েছিলেন। অন্য এক ফটোগ্রাফারের তোলা একটি ছবিতে দেখা যায়, একটি শিশুর মৃতদেহের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদছেন হাবাক। সূত্র: সিএনএন

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ