জঙ্গি জামাইয়ের দেয়া তথ্যে সাজ্জাদের বাড়িতে অভিযান

নিউজ ডেস্ক.

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানার খবর দিয়েছে বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেনের জামাই জহুরুল ইসলাম। প্রায় ছয় মাস আগেই জহুরুলকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ওই সময় এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছিল। তখন জহুরুলকে গ্রেফতারের বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকারও করা হয়নি। তবে তাকে গ্রেফতারের দিনই গোয়েন্দা সূত্রে কিছু খবর পাওয়া গিয়েছিল। সে খবরের সত্যতা মিলছে এতোদিন পর।
ওই সময় গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, গত বছরের ৩১ অক্টোবর গোদাগাড়ীর দুর্গম চরের দিয়াড় মানিকচক গ্রামে জহুরুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এরপর তাকে গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই দিনই জহুরুল কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।
জহুরুলকে আটকের দিন অভিযানে ছিলেন জেলা ডিবির একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)। জেলা ডিবিতে যাওয়ার আগে তিনি গোদাগাড়ী থানাতেও কর্মরত ছিলেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা সেদিন জহুরুলকে আটকের সত্যতা স্বীকার করেননি। তবে বেনীপুরে জহুরুলের শ্বশুর বাড়িতে অভিযান চালানোর পর তিনি সে দিনের অভিযানের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি যা জানিয়েছেন, তা হুবহু মিলে গেছে ওই দিনের ঘটনার সঙ্গে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জহুরুলকে আটকের পর কড়া নিরাপত্তায় রাখার জন্য তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে পুলিশ সদর দফতরের একটি উচ্চ পর্যায়ের দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন জহুরুলই তার শ্বশুর বাড়ির সম্পর্কে তথ্য দেয়। এরপর পুুলিশ সদর দফতর সেই তথ্য গোদাগাড়ী থানায় পাঠায়।
এরপর পরিবারটিকে নজরদারির ভেতরে রাখে পুলিশ। দীর্ঘ সময় প্রস্তুতির পর বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান শুরু করা হয়। এ অভিযানের আগে সব প্রস্তুতিও সেরে ফেলে পুলিশ। এমনকি আগের রাতে গোদাগাড়ীতে মাদকবিরোধী অভিযানও চালানো হয়। সেখানে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতেই খরচ করা হয় ৮ রাউন্ড গুলি।
থানা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, জঙ্গি আস্তানায় যাওয়ার আগে মাদকবিরোধী ওই অভিযান ছিল পুলিশের একটি অনুশীলন। বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় জহুরুলের শ্বশুর সাজ্জাদ, শাশুড়ি বেলী আক্তার, শ্যালক আল-আমিন, শ্যালিকা কারিমা খাতুন ও বহিরাগত শীর্ষ জঙ্গি আশরাফুল ইসলাম আত্মঘাতি বোমা বিস্ফোরণে মারা যায়।
কীভাবে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলল, শুক্রবার অপারেশন ‘সান ডেভিল’ শেষে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক নিশারুল আরিফ বলেন, ‘আমাদের পুলিশের গোয়েন্দারা কাজ করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আস্তানাটির সন্ধান পাওয়া যায়।’
সাজ্জাদের জামাই জহুরুলের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল কী না, সে ব্যাপারে পরিস্কার করে কিছু না বললেও এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরেই পরিবারটিকে নজরদারির ভেতরে রাখা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতেই বাড়িটিতে শীর্ষ জঙ্গি আশরাফুল আসেন। এরপরই অভিযান চালানো হয়।’
বৃহস্পতিবার সকালে জঙ্গি আস্তানা থেকে আত্মসমর্পণ করে জহুরুলের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন। ওই বাড়ি থেকে তার দুই শিশু সন্তানকেও উদ্ধার করা হয়। তাদের থানায় নেয়ার সময় গাড়িতে করে জহুরুলের ভাই ও স্থানীয় জামে মসজিদের ঈমাম মিনারুল ইসলামকেও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঈমাম মিনারুল ইসলাম জানিয়েছেন, থানায় নেয়ার পর তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিশেষ করে তার ভাই জহুরুল ও ভাবী সুমাইয়ার কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
শুক্রবার অপারেশন সান ডেভিলে গোদাগাড়ীর ওই জঙ্গি আস্তানাটিতে ১১টি শক্তিশালী বোমা, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। বাড়িতে পাওয়া যায় বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ, পুলিশের পোষাকের কাপড় ও জিহাদী বই।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ