অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা কমিটি এবং সহযোগী ও সমমনা বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে রোববার কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা এবং সোমবার যশোর জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেঠক দুটি অনুষ্ঠিত হয়। পর্যায়ক্রমে বিরোধপূর্ণ অন্য জেলা এবং সংগঠনগুলোকেও ডাকা হবে।
ওইসব বৈঠকের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে একটি সময়সূচির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার নীলফামারী এবং ৪ মে সাতক্ষীরার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আর আগামী ২৬ এপ্রিল বুধবার বিকালে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন এবং ৩০ এপ্রিল আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে জেলা নেতাদের ডাকা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগেই তৃণমূলের কোন্দল নিরসনের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে জেলা-উপজেলার নেতাদের পাশাপাশি ওইসব এলাকার সংসদ সদস্যদেরও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এসব বৈঠকে বিরোধ নিরসন করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করা হবে।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। বিশেষ করে অনেক স্থানেই স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের বিরোধ বেশ তুঙ্গে। যার নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নির্বাচনের ওপর পড়েছে। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার হেরে যাওয়া। এ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার তাকে সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। একই ধরনের অভিযোগ তোলা হয় সিটি কর্পোরেশনের আরেকাংশের সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) বিরুদ্ধেও। এভাবে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, দলের এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে উল্লিখিত বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামসহ বেশ কয়েকটি সমর্থক সংগঠন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সরাসরি কোনো বিরোধ না থাকলেও আছে সমন্বয়হীনতা। আর আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের বিরোধের কারণে গত কয়েক বছরে এ খাতের বেশ কয়েকটি নির্বাচনে হেরেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ দলের সহযোগী সংগঠন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মূলত দলের অভ্যন্তরে এবং সমর্থক সংগঠনগুলোর বিরোধ, দূরত্ব ও সমন্বয়হীনতা কমিয়ে আনার জন্য সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকগুলোয় আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। আমরা দলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছি। ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আবারও নিরঙ্কুশ বিজয় ছিনিয়ে আনবে। সে জন্য পুরো শক্তিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর সে লক্ষ্যেই দলের ঐক্যের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা, কারও মধ্যে কোনো দূরত্ব আছে কিনা, আমরা সেগুলো খুঁজে বের করব। যদি তেমন কিছু পাওয়া যায় সব পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা করে তার সমাধানও বের করা হবে। আর তাছাড়া এর মাধ্যমে তৃণমূল এবং কেন্দ্রের একটি নিবিড় সম্পর্কও গড়ে উঠবে।’
প্রসঙ্গত গত ১৯ এপ্রিল বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, তারা দলের ভেতরের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সভায় সাংগঠনিক বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক অবস্থা, সংকট এবং সমাধান নিয়ে আমাদের সাংগঠনিক নেতারা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। আমাদের কিছু কিছু সংকট আছে। সেগুলো আমরা ধারাবাহিকভাবে জেলা-উপজেলা নেতাদের সভাপতির কার্যালয়ে ঢাকায় ডেকে এনে এই মাস থেকেই আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করব।’