দুঃস্বপ্ন ঘরে তুলছেন কৃষক

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ. 

সবুজ পাতার মাথাটা উঁচিয়ে হেলে যায় ধানের শীষ। সে শীষে থাকে কৃষকের স্বপ্ন। মৃদু বাতাসে যখন দোল খায় ধানের শীষ, কৃষকের হৃদয় তখন নেচে ওঠে। চলতি বোরো মৌসুমে ধান ক্ষেতে আক্রমন করে নেক ব্লাষ্ট রোগ। এ রোগের আক্রমনে কৃষকের স্বপ্ন চিটায় পরিনত হয়েছে। ফলে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় মৌসুম শেষে কৃষক ঘরে তুলছেন দুঃস্বপ্ন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও কৃষকের তথ্যমতে, উপজেলায় ৫৪হাজার কৃষক ১৫হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। এরমধ্যে ১১হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ৪হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাতের ধান রয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে মাত্র ১৫ হেক্টর জমিতে নেক ব্লাষ্ট রোগের আক্রমনের ধানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে নেক ব্লাষ্টের আক্রমন ঘটে। এরমধ্যে ব্লাষ্টের আক্রমনে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ৩০০ হেক্টর জমির আংশিক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নেক ব্লাষ্টের আক্রমনে জমিতে ধানের গাছ খড়ের রং ধারন করেছে। ধানের শীষে ফল নেই। চিটায় পরিনত হয়েছে ধান। বৈরী আবহাওয়ায় আক্রমন করে ব্লাষ্ট রোগ। কীটনাশক প্রয়োগেও জমির ফসল রক্ষা করতে পারেনি কৃষক। এতে কৃষককে বিপুল পরিমানে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

৩ বিঘা জমিতে পাইজাম ধান চাষ করেন সরুগ্রামের কৃষক কারিমুল হাসান। প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদের ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। প্রতিমন পাইজাম ধানের মূল্য ১২০০টাকা। এক বিঘা জমিতে ১৬ মন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকে। এতে প্রতি বিঘায় প্রায় ১৪ হাজার টাকা লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি।
কারিমুল হাসান বলেন নেক ব্লাষ্টের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারিনি। জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোন ফল পাইনি। জমি থেকে ১ কেজি ধানও পায়নি। অথচ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে কৃষি শ্রমিক নিয়ে জমি থেকে চিটাযুক্ত ধান কর্তন করতে হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৮জন কৃষি শ্রমিক দিয়ে কর্তনের কাজ করাতে হয়েছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
পেঁচিবাড়ী গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বর্গাচাষী। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তিনি। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ব্রি ধান ২৮ চাষ করেছিলেন। এনজিও’র ঋণের টাকা ও ধানের উপর টাকা ধার নিয়ে চাষাবাদ করেন তিনি। ৩ বিঘা জমির পুরো ফসল ব্লাষ্ট রোগে নষ্ট হয়েছে। আমজাদ হোসেন জানান, ফসল নয়, স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে। জমি থেকে ঋণের বোঝা নিয়ে যাচ্ছি গোলায়।
মাঠ পর্যায়ে ব্লাষ্ট রোগের ক্ষতির বিবরণ ইতিমধ্যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। ব্লাষ্টের আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। এদিকে ব্লাষ্টে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের মাঝে ধানচাষে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে প্রান্তীক ও বর্গা চাষীদের মাঝে ব্লাষ্টের আক্রমনে বিরূপ প্রতিক্রীয়া সৃষ্টি হয়েছে। সবুজ ধান ক্ষেতে লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন পুড়ে বর্গা চাষীরা গোলায় তুলছেন ঋণের বোঝা।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ