
আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ.
দুর্গা পূজা মানেই নানা আয়োজন, কমিটির চরম ব্যস্ততা। দাওয়াত কার্ড বিতরণ থেকে প্রতিমা বিসর্জন অবধি। প্রতিমা তৈরী, ডেকোরেশনসহ এটা-ওটা’র জন্য দৌড়ের সাথে থাকে নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পূজা আয়োজনের অতিরিক্ত চাপ। যার কারনে পূজা মানেই একদল পুরুষ থাকেন নেতৃত্বে। পূজার এই পুরুষ প্রথা ভেঙ্গেছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদরের কুঠিবাড়ী গ্রামের নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা।
জানা যায়, উপজেলা সদরের মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজের পাশে কুঠিবাড়ীর অবস্থান। ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে নীলকর সাহেবরা অবস্থান নেন। সেই স্থানটি কুঠিবাড়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। স্থানীয় কৃষকদের জমিতে বাগদিদের নীলচাষ করাতেন নীলকর সাহেবরা। ইংরেজরা দেশত্যাগ করেছেন অনেক আগেই। তবে রয়ে যায় বাগদি সম্প্রদায়ের নীলচাষ শ্রমিকরা। কালের আবর্তে নীলচাষ শ্রমিকদের উত্তরসূরীরা এখন ধুনটের কুঠিবাড়ীতে বসবাস করেন। বর্তমানে এ পাড়ায় রয়েছে ১৬০টি পরিবার। আদিবাসী ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ হওয়ায় এ পাড়ার মানুষের জীবনমান অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। যার কারনে সব কিছুতেই পিছিয়ে থাকতে হয় এ পাড়ার মানুষদের। তবে শারদীয় দূর্গা উৎসবে এ পাড়ার নারীদের উদ্যোগ এগিয়ে নিয়েছে তাদের। এ বছর কুঠিবাড়ী দূর্গা পূজার আয়োজন করেছে নৃ-গোষ্ঠীর নারীরাই।
কথায় আছে যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। নৃ-গোষ্ঠীর এই নারীদের জন্য কথাটি ষোল আনা সত্য। পুরুষদের প্রথা ভেঙ্গে পূজার দায়িত্ব নিয়েছেন নারীরা। কুঠিবাড়ী গ্রামের দুর্গা পূজা আয়োজক কমিটির ১১ সদস্যই নারী। আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শোভা রানী রায় ও বিনোদিনী রায়। প্রতিদিনের রুটিন মতো সংসার সামলিয়ে তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন পূজার আয়োজনে।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য হৃদয় কুমার রায় ধুনট বার্তাকে বলেন, বিগত বছর গুলোতে কুঠিবাড়ীতে দুর্গা পূজার আয়োজন ছিলো উৎসবমুখর। বর্তমানে আমাদের একটি শ্মশান নির্মাণের কাজ চলছে। এ কারনে আমরা এ বছর দুর্গা পূজার আয়োজন করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেই।
হৃদয় কুমার রায় জানান, পুরুষদের এ সিদ্ধান্ত মানতে পারেনি নারীরা। তারা নিজেরা বৈঠক করে পূজার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে পুরুষদের বললে তারা প্রথমে দ্বি-মত পোষন করেন। পরে নারীদের আগ্রহের কাছে তারা হার মেনে পূজার আয়োজনে সহযোগিতা শুরু করেন।
শোভা রানী রায় ধুনট বার্তাকে বলেন, প্রথমে খুব ভয়ে ছিলাম, আমরা পারবো কিনা? শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক পূজা উঠবে কিনা? আমরা নিজেদের মধ্যে কাজগুলো ভাগ করে নেই, তারপর সংসারের কাজের পাশাপাশি পূজার আয়োজনে সময় দেই। পুরুষরাও আমাদের সহযোগিতা করছে। আর পূজা শুরুর পর থেকে এখন সবাই উৎসাহ দিচ্ছে, আমাদের খুব ভালো লাগছে।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র সাহা ধুনট বার্তাকে বলেন, নারীদের আয়োজনে পূজার এ আয়োজন অনেকটা চমক তৈরী করেছে। একটা পূজার আয়োজক কমিটির সকলেই নারী। এটা নারীর অগ্রযাত্রার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সবাই এ পূজা কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান পূজা মন্ডপটি পরিদর্শন করে গেছেন।
সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান ধুনট বার্তাকে বলেন, নারীদের উদ্যোগে একটি পূজার আয়োজন হয়েছে। শোনার পর কুঠিবাড়ী পূজা মন্ডপটি পরিদর্শন করেছি। তাদের সাথে কথা বলেছি। নৃ-গোষ্ঠীর এসব নারীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ হয়নি। কমিটির অনেকেই প্রাথমিকের গন্ডিও পেরোয়নি। তবুও তাদের এমন উদ্যোগ, অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।


