ধুনটে বাঁধ রক্ষায় রাত জেগে পাহারা!


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820

Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ.



    বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাটির তৈরী বাঁধের পূর্বতীর থেকে ঈঁদুরের গর্তদিয়ে শতাধিক স্থানে পশ্চিমতীরে পানি প্রবেশ করতে দেখা গেছে। যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে প্রবেশ করবে পানি। এতে ব্যাপক জান-মালের ক্ষতি সাধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ কারনে রাত জেগে ৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন দুর্গত এলাকার হাজারো নারী-পুরুষ।

    পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ১২ঘন্টায় ৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার সকাল ৬টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণে মাধবডাঙ্গা থেকে উত্তরে আটাচর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। বন্যার পানি বাঁধে আঘাত করছে। ৭ কিলোমিটার বাঁধের পূর্বতীরে ১ থেকে ৪ ফুট নীচে পানির অবস্থান। পুরানো বালু মাটির তৈরী বাঁধে রয়েছে অসংখ্য ঈঁদুরের গর্ত। এসব গর্তদিয়ে সোমবার থেকে বিভিন্নস্থানে বাঁধের পশ্চিম তীরে পানি চুইয়ে পড়তে থাকে। আটাচর, চুনিয়াপাড়া, বানিয়াজান, শিমুলবাড়ী, কৈয়াগাড়ী, ভান্ডারবাড়ী, ভূতবাড়ী গ্রামে প্রায় শতাধীক গর্তদিয়ে পশ্চিম তীরে পানি প্রবেশ করছে। এতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাঁধটি। বিশেষ করে চুনিয়াপাড়া এলাকায় মানাষ নদীর মোহনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থানে পানি চুইয়ে পড়ছে। বাঁধের পূর্বতীরে অনেক উঁচুতে পানির অবস্থান। পশ্চিমতীরে মানাষ নদীর গভীরতার কারনে ওই স্থানটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে সেখানে বাঁধ ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে। চুনিয়াপাড়া থেকে বানিয়াজান পর্যন্ত বাঁধটি অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করবে। এতে বৃহত্তর এলাকায় বন্যা হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। একই সাথে মানুষের জান-মালের ক্ষতি সাধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

      মঙ্গলবার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, আতংকিত রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত ও পশ্চিম তীরের মানুষ। আতংকে নিন্দ্রাহারা মানুষ রাত জাগছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। চোখ রাখছেন বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান গুলোতে। কোথাও পানি প্রবেশের লক্ষণ দেখা দিলেই বালুর বস্তা ফেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছেন তারা। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের সংবাদ পেয়ে মধ্যরাতে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান। তিনি স্থানীয় লোকজনকে ধ্যর্য ও সাহসিকতার সাথে দুর্যোগ মোকাবেলার পরামর্শ দেন। এছাড়া বাঁধ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে নিজেদের কাজে হাত লাগাতে বলেন। এক পর্যায়ে নিজে বেলচা হাতে বস্তায় বালু ভরার কাজ করে স্থানীয় লোকজনকে কাজে উৎসাহ দেন তিনি। বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁধের পশ্চিম তীরে যে স্থান গুলোতে পানি চুইয়ে পড়ছে, তার আশপাশের ঘরবাড়ী থেকে লোকজন আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

      চুনিয়াপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ বাদশা মিয়া জানান, এবার যমুনায় রেকর্ড পরিমানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভাঙ্গার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় আতংকে চোখে ঘুম আসে না। তাই পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই মিলে রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছি। ওই গ্রামের কাদের গনি বলেন, যেখানে পানি চুইয়ে পড়তে থাকে, সেখানেই গ্রামের লোকজন মিলে বালুর বস্তা ফেলছি। আমরা যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে পানি চুইয়ে পড়ার স্থানে বাঁধ ভাঙ্গার সম্ভাবনা থাকে। একারনে রাত জেগে সবাই বাঁধ পাহারা দিচ্ছি।

      সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান বলেন, বালু মাটির তৈরী বাঁধটিতে অসংখ্য ঈঁদুরের গর্ত থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এলাকার সাধারণ মানুষ রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। খবর পেয়ে বাঁধে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে সময় কাটিয়েছি। তাদের উৎসাহ দিতে কিছু সময় নিজেও কাজ করেছি। আশা করছি বাঁধ ভেঙ্গে মানুষের জান-মালের ক্ষতির হাত থেকে সৃষ্টিকর্তা আমাদের রক্ষা করবেন।

      অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ