Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820
নীলফামারী প্রতিনিধি.
ভারতের দৌমহনী থেকে পানি ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। যার ফলে উজানে ভারতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় তিস্তার উজানে ভারতের অংশে ভারতীয় সেচ মন্ত্রণালয় শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।
পাশাপাশি শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে স্থানীয় প্রশাসন রেড অ্যালার্ট জারি করে। এর আগে মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান রেড অ্যালার্ট জারির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শনিবার সন্ধ্যায় তিস্তার উজানে ভারতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। রাত ৯টা নাগাদ তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর সব ইউপি চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে নদীতে অবস্থানরতদের সরিয়ে আনার নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১১টায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়।
সন্ধ্যায় পানি বৃদ্ধির কারণে মাইকিং করে তিস্তায় বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হয় বলে নিশ্চিত করেন উজানের পূর্ব ছাতনাই ও খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান।
পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান বলেন, প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকায় করে তিস্তায় বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তিস্তায় দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তার উজানে ভারতের অংশে ভারতীয় সেচ মন্ত্রণালয় সন্ধ্যা ৬টায় হলুদ সতর্কতা জারি করার ফলে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়।
তিস্তায় অবস্থানরতদের বাধসহ উচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ প্রদান করা হয় বলে জানান ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম।
তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা বাঁধের সব গেট খুলে দেয়ার শনিবার বিকেল থেকে দ্রুত বাড়তে শুরু করে তিস্তার পানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
একদিকে মুষলধারে বৃষ্টি অন্যদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে চরম বিপাকে পড়েছে তিস্তার পাড়ের বন্যাদুর্গত এলাকার লোকজন। উজানের ঢলের পানি ঘোলা, বিভিন্ন গাছের পাতা ও কচুরিপানা থাকার কারণে এলাকাবাসীর ধারণা উজানে বন্যার পানি আসছে।
তিস্তা নদীর উজানে বসবাস করা পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন ও পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। সেই তিস্তা উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করে রেড অ্যালার্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে।
পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামের মিরাজ উদ্দিন বলেন, পানির স্রোতের অবস্থা দেখে বুঝা যায় আশপাশের গ্রামগুলো সব ডুবে যাবে। সেই সঙ্গে বড় ধরনের বন্যা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
পাউবো অফিসে সূত্রে জানা যায়, তিস্তার টানা কয়েকদিনে বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তার ব্যারেজের ৬০ কিলোমিটার উজানে ভারত গজলডোবা বাঁধটি ১৯৯৮ সালে নির্মাণ করেন।
এদিকে, টানা ৩ দিনে টানা বর্ষনে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যায়। পানি বন্দির কবলে পরে সরকারি চকুরীজীবি হতে কর্মজীবি মানুষের দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে এবং কয়েকটি গ্রাম পানি বন্দি হয়ে পরেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক হয়ে পরেছে। কিছু কিছু এলাকায় পানিবাহীত রোগের আসংখ্যা দেখা দিয়েছে। স্কুল, কলেজে, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, মাঠ ঘাট পানিতে থৈ থৈ করছে, কোনটি নদী, কোনটি উঠান তা নির্ণয় করা দুষ্কর হয়ে পরেছে। এরই মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ভাবে ভারতের সামিলাবাস এলাকা হতে আসা বুড়া তিস্তা ও টারুদাহ নদী বন্যায় ভরপুর হলে বালাপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আজিজার রহমান ও আকবর আলীর ৩নং ও ৫নং ওয়ার্ড, টেপা খড়িবাড়ী, খাগা খড়িবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন এর ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ী, ঝুনাগাছ চাপানী ১নং ওয়ার্ড এবং দক্ষিন ঝুনাগাছ চাপানী ৪নং ওয়ার্ড হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দিহয়ে পরে। সেই সাথে অনেক মৎসচাষীদের প্রজেক্ট বন্যায় বিলিন হয়ে গেছে।
ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি শনিবার সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২.৪০) ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর শোঁ শোঁ শব্দ আর গর্জন তিস্তা অববাহিকা কাঁপিয়ে তুলেছে। অপরদিকে বুড়ি তিস্তা নদীটি ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে।
বন্যা শুরু এবং পরবর্তী সময় বন্যার দুর্গত মানুষের জন্য ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা কি পদক্ষেক নিয়েছেন তা জানাতে চাইলে ডাঃ মোঃ সারোয়ার আলম প্রতিবেদকে জানান ইতি মধ্যে আমরা ১০টি ইউনিয়নে ১০টি মেডিকেল টিম ও একটি অতিরিক্ত হাসপাতালের মেডিকেল টিম গঠন করেছি। সেই সাথে আমরা একটি মনিটরিং সেল যার কন্ট্রাক নং- ০১৭৩০-৩২৪৬৮৩ চালু রাখা হয়েছে। শনিবার সকাল হতে বন্যা পরিস্থিতি আলাদা আলাদা ভাবে পরিদর্শন করেন নীলফামারী-১ আসনে সংদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম, কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, প্রকৌশলী কর্মকর্তা আবু সালেহ, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ রনজিত কুমার বর্মন ও তার টিম।
এছাড়া তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের জলঢাকার দুন্দিবাড়ির দিনাজপুর প্রধান সেচ ক্যানেলের ডান তীরের বাঁধ দুইটি স্থানে বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে, ভারী বর্ষন ও বন্যার কারণে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ খালেদ রহীম জানান, প্রশাসনের সব স্তরের সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে তা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির কাজ করা হচ্ছে।