পত্নীতলায় গবাদিপশুর খাদ্য সংকাট, ভেসে গেছে তিন কেটি টাকার মাছ

পরেশ টুডু, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি.


পত্নীতলায় আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার ঘোঘনগর, আমাইড়, কৃষ্ণপুর, পাটিচরা, নজিপুর, পত্নীতলা ইউপি ও নজিপুর পৌরসভার নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার পরিবার সহ প্রায় ৩ শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে মানুষরা উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাঁধ এবং উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসন সহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে এখন পর্যন্ত যে ত্রান দেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত অপ্রতুল। বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানিতে ও অধিক বৃষ্টিাপাতের কারনে উপজেলার পাকা রাস্তা ২ কি.মি এবং গ্রামীন কাঁচা রাস্তা কয়েক কি.মি রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এবারে উপজেলার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে পাশাপাশি উপজেলার ৫ শতাধিক পুকুর ডুবে প্রায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মাছ ভেসে গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ অপরিকল্পিত ভাবে নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে টাক্টর দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে সঠিক সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় বাঁধের ধার গুলি ভেঙ্গে যাওয়ায় আজ আত্রাই নদীর বেশ কিছু যায়গার বাঁধ ভাঙ্গার কারন হয়ে দাঁিড়য়েছে।

প্রায় ২০ বছর পর অত্র এলাকায় বন্যার পানিতে এ এলাকার মানুষ ব্যাপক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। ব্যাপক বন্যায় উপজেলার প্রায় ৩শটি কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। উল্লেখ্য আত্রাই নদীর পানি বাড়াতে নদীর চড়ে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা নজিপুর পৌর সভার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একমাত্র পৌর পার্কটি এখন পানিতে নিমজ্জিত।

বন্যায় উপজেলার ১১১.২৯ হেক্টর জলার ৫২৯টি পুকুরের প্রায় সব মাছ ভেসে গেছে। এসব পুকুরে নেট দিয়ে প্রতিবন্ধকতার চেষ্টা করা হলেও পুকুর গুলোর প্রায় সব মাছই ভেসে যায়। এব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরুল কায়েশ জানান, আকস্মিক ভাবে বন্যা হওয়ায় পুকুর মালিকরা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেননি। বন্যায় উপজেলার ১১১.২৯ হেক্টর জলার ৫২৯টি পুকুরের মাছ ভেসে প্রায় ৩ কোটি ১২ লক্ষ ২৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করছি।

বন্যার পানিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকদের কাংক্ষিত রোপা আমন সহ রবি শস্য ক্ষেত। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, এবারে উপজেলায় প্রায় ২৪ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমন, ৬হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে আউশ সহ ৩৫০ হেক্টর জমিতে শাক-সব্জি আবাদ করে এলাকার কৃষকরা। এর মধ্যে আমনের ধান বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৪৩০ হেক্টর, আউশ পাকা ধান প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হলেও বাকি ১৭৭০হেক্টর জমি সহ প্রায় সব শাক-সব্জির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আগামী আমন ফসল নিয়ে এলাকার কৃষকরা সঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

উপজেলায় বন্যায় এবারে মানুষ সহ গবাদি পশুর কোন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও ঘর-বাড়ি, মাছ সহ ফসলে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধে আশ্রয় নেয়া কয়েকজন বলেন, ‘মানুষের খাবার জুটলেও গরু-ছাগল নিয়ে মহা-যন্ত্রনায় পড়ে গেছি। গরু-ছাগলের কষ্টের শ্যাষ নাই। ঘাস নাই। খ্যাড় (খড়) নাই। সব ডুবে গেছে। বেশি দাম দিয়াও কোনোটে (কোথাও) খ্যাড় -ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। খাবার না পেয়ে গরু-ছাগল গুলা দুর্বল হয়ে য্যাচ্ছে।’ এব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর খাদ্য সংকটের কথা নিশ্চিত করেছে।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগস্থ একটি পৌরসভা সহ ৬টি ইউনিয়নের ১০৪টি গ্রামের ৬হাজার ৫শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ২৮০টি মাটির ঘর-বাড়ি সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং আংশিক ৩হাজার ১শটি ঘর-বাড়ি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, এবারে উপজেলার বন্যা দূর্গত এলাকায় বে-সরকারী বিভিন্ন সংস্থা বাদেও সরকারী ভাবে ত্রান সামগ্রী হিসাবে নগদ ২লক্ষ টাকা, চাল সহ ৮হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরন করা হয়েছে। এবং বন্যা দূর্গত এলাকায় আরো ত্রান সামগ্রী দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ