Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820
পরেশ টুডু, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি.
পত্নীতলায় আত্রাই নদীর কয়েকটি বাঁধ ভেঙ্গে প্রতিদিন নতুন নতুন করে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। আত্রাই নদী, মনোহর গঙ্গা খাড়ি, বুড়িদহ বিল সহ অন্যান্য ছোট, বড় খাড়ি, বিল, পুকুর ভরে টই টুম্বুর হয়ে হু-হু করে জনবসতি এলাকায় পানি প্রবেশ করে গ্রামের মাটির ঘর-বাড়ি ধ্বসে পড়ছে, পুকুরের মাছ, পাকা আউশ ধান, আমনধান, কলাবাগান সহ বিভিন্ন ফসলি জমি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। প্রবল বেগে পানি বিভিন্ন সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ঘোঘনগর, আমাইড়, কৃষ্ণপুর, পাটিচরা, নজিপুর, পত্নীতলা ইউপি ও নজিপুর পৌরসভার নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার পরিবার সহ প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে মানুষরা বাঁধ এবং উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানিতে ও অধিক বৃষ্টিাপাতের কারনে উপজেলার প্রায় ২হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে অবৈধ ভাবে নদীর বিভিন্ন ধার থেকে বালু উত্তলোন সহ বালু বহনকারী ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল এবং ইট ভাটা তৈরির কারনেই বাঁধ ভাঙ্গার কারন হিসাবে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, উপজেলার ঘোষনগর ইউপির শ্রী-পুর, চক শ্রী-পুর, বিন্নান পুর, বৌরহট্টি, নেবালপুর, চন্ডিপুর, গগনপুর, জামগ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। আমাইড় ইউপির চক আমাইড় ও খামার পাড়ায় আত্রাই নদীর পানি এবং চকভবানী, সানকি-ডোবা, গণকাহার, শিমুলিয়া, সিধাতৈল, নোদবাটি সহ বেশ কিছু এলাকায় ছোট যমুনা নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
পানি প্রবেশের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এই ইউপিতে আত্রাই এবং ছোট যমুনা নদীর পানিতে আরো বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণপুর ইউপির গোপীনগর, পানবোরাম, মিরাপুর, শালডাঙ্গা, মহিমাপুর, পাগলীডাঙ্গা, বিষ্টপুর, শালবাড়ি, চকমুলি, ডাঙ্গাপাড়া, আমাইপুকুর, সোনাডাঙ্গা, চকগোবিন্দ, চক আক্রাম, গয়ারপুর, কৃষ্ণবল্লভ গ্রাম।পত্নীতলা ইউপির পতœীতলা, ইছাপুর, কাঁটাবাড়ি, কল্যানপুর, নন্দনপুর, বালুঘা এবং কঞ্চিপুকুর গ্রাম।
পাটিচরা ইউপির কাশিপুর ও ছালিগ্রাম মধ্যবর্তিস্থান শিমুল তলী (বুড়িদহ বিলের সন্নিকটে) এলাকার প্রায় ৫শ ফিট বাঁধ ভেঙ্গে মল্লিকপুর, মোবারকপুর, বাগুড়িয়া, ছালিগ্রাম, সাঁওতাল পাড়া, কাশিপুর, রশোকানাই, পাটি আমলাই, হেলেঞ্চাডাঙ্গি, আমিনাবাদ, আমবাটি, গাহন, চকযগদ, পাহার কাটা, ধলাহার, বাঁশবাড়ি, পূর্ব পাটিচরা, পশ্চিম পাটিচরা, ডোহানগর, যদুবাটি, ফিচুকুড়ি, ইশবপুর, চক রাধা সহ ১৪ বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। নজিপুর ইউপিরর কাঞ্চন, রঘুনাথপুর, রামজীবনপুর, বানিল্লাসহ আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এবাদে দোচাই, চক দোচাই, বামনাবাজ, সুলতানপুর, ব্যাংডম গ্রামে পানি প্রবেশের সম্ভাবণা রয়েছে।
এদিকে নজিপুর পৌরসভা এলাকার বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করছে। বর্তমানে চাঁদপুর সুইজগেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্রমেই পানি বৃদ্ধি পেয়ে ছোট-চাঁদপুর এবং চকনিরখিনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতাল এবং নজিপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ও কলেজ পাড়ায় পানি প্রবেশ করেছে। এধারা অব্যাহত থাকলে মাষ্টারপাড়া, মাদ্রাসাপাড়া, সরদারপাড়া, নতুনটহাট পাড়া, হাইস্কুল পাড়া, আলহেরা পাড়াসহ বেশ কিছু মহল্লায় পানি প্রবেশ করতে পারে। এবাদে হরিরামপুর এবং চকজয়রামে পানি প্রবেশ করলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। পলিপাড়া, রাজপাট সুইজগেট এলাকা এবং পালশা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আকাশের বৃষ্টি এবং নদীর প্রবল স্রোতে নদীর বাঁধ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এদিকে বাঁধ উপচে পত্নীতলা থানা সংলগ্ন নজিপুুর পুরাতন বাজারে পানি ঢুকে পড়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও এসব এলাকার প্রায় দুই শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব বাড়ি ঘরের মানুষ জনেরা বাঁধে এবং উঁচু স্থানে তাদের গৃহপালিত পশুপাখি ও আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করছে। বন্যার পানিতে গ্রামীন সড়ক গুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন সহ নজিপুর-সাপাহার আঞ্চলিক সড়কের কঞ্চিপুকুর এলাকায় সড়কের উপর পানি ওঠায় এবং নজিপুর- ধামইরহাট আঞ্চলিক সড়কের ঠুকনিপাড়া থেকে মরাপুকুর পর্যন্ত সড়কের উপর পানি ওঠায় ভারি যানবাহন চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ অপরিকল্পিত ভাবে নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে টাক্টর দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে সঠিক সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় বাঁধের ধার গুলি ভেঙ্গে যাওয়ায় আজ আত্রাই নদীর বেশ কিছু যায়গার বাঁধ ভাঙ্গার কারন হয়ে দাঁিড়য়েছে।
বন্যার পানিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে কৃষকদের কাংক্ষিত রোপা আমন সহ রবি শস্য ক্ষেত। সেই সাথে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য আত্রাই নদীর পানি বাড়াতে নদীর চড়ে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা নজিপুর পৌর সভার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একমাত্র পৌর পার্কটি এখন পানিতে নিমজ্জিত।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, এবারে উপজেলায় প্রায় ২৪ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমন, ৬হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে আউশ সহ ৩৫০ হেক্টর জমিতে রবি শস্য আবাদ করে এলাকার কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ প্রবল বর্ষণ ও বন্যার পানিতে উপজেলার কৃষকদের মাঝে ফসলের ক্ষতি হওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার প্রায় ২হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।