প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে প্রমাণিত ৩ অভিযোগে মামলা হচ্ছে ২টি

নিউজ ডেস্ক.

স্বঘোষিত ধনকুবের প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দাদের করা শুল্ক ফাঁকি, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতির ৩টি অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় সরাসরি প্রিন্স মুসাকে প্রধান আসামি এবং মানি লন্ডারিংয়ে সহযোগী আসামি করে শুল্ক গোয়েন্দারা মোট ২টি মামলা করবে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান।
অাজ রবিবার মুসা বিন শমসেরের জবানবন্দি শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এসময় শুল্ক গোয়েন্দা মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান আরও জানান, আর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুদককে (দুর্নীতি দমন কমিশন) জানানো হবে। তাদের আইনানুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবে।
মইনুল খান বলেন, প্রিন্স মুসা বিন শমসেরকে আজ রবিবার বিকেল ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুই সদস্যের তদন্ত টিম। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। তিনটি অভিযোগের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে বলে নিশ্চিত করেছেন আমাদের তদন্ত টিম। তা হলো- শুল্ক ফাঁকি, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি।
ইংল্যান্ডের নাগরিক ফরিদ নাবিরের কাছ থেকে ২০১০ সালের ১২ মার্চ দুই কোটি ১৫ লাখ টাকায় ল্যান্ড রোভার গাড়িটি মাত্র ৫০ লাখ টাকায় ক্রয় করেন ধনকুবের প্রিন্স মুসা। কিন্তু ফরিদ সে টাকা বাংলাদেশে না রেখে বিদেশে নিয়ে যান। যা মানি লন্ডারিং আইনের লঙ্ঘন। এজন্য ফরিদ নাবিরকে প্রধান আসামি করে মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করা হবে। একই মামলায় সহযোগী আসামি হবেন মুসা বিন শমসেরসহ অন্য সহযোগীরা।
অন্যদিকে, গাড়িটি ক্রয় করার ক্ষেত্রে ১৭ লাখ টাকার ভুয়া বিল তৈরি করে শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়। ওই ১৭ লাখ টাকা আজও পায়নি শুল্ক বিভাগ। এজন্য তাকে সংশ্লিষ্ট আইনে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হবে। ল্যান্ড রোভার গাড়িটি বিআরটিএ’র কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ছাড়পত্র নেয়া হয়। যা দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) আইনে অপরাধ। এজন্য আমরা দুর্নীতির বিষয়টি দুদককে জানাব। দুদুক তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
জিজ্ঞাসাবাদে মুসা কী বলেছেন- জানতে চাইলে ড. মইনুল খান বলেন, ‘তিনি দুই ঘণ্টাব্যাপী বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। আশা করছি আর তাকে ডাকতে হবে না। প্রয়োজন হলে তার পক্ষ থেকে কেউ এসে তথ্য দিয়ে যাবেন। তার বিরুদ্ধে একটি গাড়িতে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। আরও অনেক গাড়ি রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে তা যাচাই ও প্রমাণসাপেক্ষ। যদি সে রকম তথ্য-প্রমাণ মেলে তবে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে আজ রবিবার বিকাল ৩টার দিকে কাকরাইলের শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হন প্রিন্স মুসা বিন শমসের। এসময় আইডিইবি ভবনের সামনে সংবাদকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরলে কোনো কথা না বলেই শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে প্রবেশ করেন মুসা। এরপর বিকেল সোয়া ৩টা থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দারা।
উল্লেখ্য, গত ২১ মার্চ শুল্ক গোয়েন্দার দল মুসার গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর রোডের ৮ নং বাড়িতে অভিযান চালিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ি জব্দ করে। গাড়িটি প্রিন্স মুসা বিন শমসের নিজে ব্যবহার করে আসছিলেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তার দখল থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। গাড়িটি ভোলা বিআরটিএ থেকে ভুয়া বিল অব অ্যান্ট্রি দিয়ে ফারুকুজ্জামানের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। জব্দ করার সময় গাড়ির নম্বর লেখা ছিল ভোলা-ঘ-১১-০০৩৫। গাড়ির চেসিস অনুসারে এটি কার্নেট ডি প্যাসেজের মাধ্যমে আনা হলেও শর্ত অনুযায়ী পুনঃরপ্তানি হয়নি। এতে করে সরকারের প্রায় দুই কোটি ৪৮ লাখ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
গত ২০ এপ্রিল শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিলে প্রিন্স মুসা আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ‘বাকশক্তি হারিয়েছেন’ দাবি করে সময় প্রার্থনা করেন। চিকিৎসকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দুই সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করে শুল্ক গোয়েন্দা।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ