ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন, রাজিবপুরে সহস্রাধিক পরিবার সর্বশান্ত

নিউজ ডেস্ক.

বর্ষার শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদের তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার নদের তীরবর্তী মানুষজন। ইতিমধ্যে ভাঙনের শিকার প্রায় দুই হাজার পরিবার ঘর-বাড়ি ভিটে-মাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরকারি ও বেসরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ এ পরিবারগুলোর।
ভাঙন ঠেকাতে ইউনিয়নবাসী মানব বন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও তা নজরেই আসছে না কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও মিলছে না কোনো সহযোগিতা। এ অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারগুলোর।
রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। প্রতিদিনই নদের গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়িসহ ফসলী জমি। হুমকীর মুখে পড়েছে মোহনগঞ্জ বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় ভাঙনরোধে দ্রুত সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
গত ১ মাসে রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মোহনগঞ্জ বাজার, নয়ারচর, নেওয়াজি, শংকরপুর, হাজিপাড়া, ফকিরপাড়া ও ব্যাপারীপাড়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামের ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন তীব্র আকার ধারন করেছে। গত ১৫ দিনে নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ও শতশত একর ফসলী জমি।
এদিকে ভিটে-মাটিসহ ফসলী জমি হারানোর আশংকায় নির্ঘুম রাত কাটছে ভাঙনের হুমকীতে থাকা পরিবারগুলোর।
মোহনগঞ্জ গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, এ পর্যন্ত ৪ বার বাড়ি ভেঙেছে। আবারও ঘর-বাড়ি নদীর কিনারে পড়েছে। দু-একদিনের মধ্যে না সরালে নদের গর্ভে চলে যাবে। আমরা সরকারের নিকট আবেদন জানাই সরকার যেন নদী ভাঙনটা বন্ধ করে দেয়।
ভাঙনের শিকার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন, ১০ দিন হয় ভাঙনের মুখে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নদের নিকটবর্তী অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। এখনও ঘর তুলতে পারি নাই। টাকা নাই। মেম্বার-চেয়ারম্যানরাও কোনো সাহায্য দেয় না। এ অবস্থায় কোথাও যাওয়ারও কোনো উপায় নাই। দিনে একবেলা খাবার জোটে আর বাকি দুই বেলা উপোস থাকতে হয়।
একই এলাকার ভাঙনের শিকার সোবহান মিয়া বলেন, মানুষের জায়গার উপর ঘর রেখেছি। ভিটে-মাটি, আবাদি জমি সবই নদীতে গেছে। কোথাও ঘর উঠাবো সে জায়গাও নাই। বউ-বাচ্চা নিয়া বিপদে আছি।
মোহনগঞ্জ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমা খাতুন জানান, আমাদের স্কুল নদের কিনারে পড়েছে। স্কুল ভেঙে গেলে আমাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষা শুরুর সাথে সাথেই তার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র ভয়াল রুপ ধারন করেছে। তার ইউনিয়নেই প্রায় দেড় হাজার পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীকে নিয়ে অনেকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। শুধু বলে বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানাই অতিদ্রুত যেন বরাদ্দ দিয়ে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
রাজিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, ভাঙন ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার বির্স্তীন এলাকা জুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন চলছে। আমরা এ দুইটি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ কাজ এবং প্রায় ২০ কিলোমিটার ড্রেজিংসহ একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছি যেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। মোহনগঞ্জ বাজার এলাকায় ভাঙন রোধে গত বছর কিছু কাজ করেছি। এবছরও ৩’শ ৩০ মিটার কাজের অনুমোদন পেয়েছি। শীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে। এছাড়া প্রবল ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে জরুরি কাজ করার জন্য বোর্ডে বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ