ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন
নিউজ ডেস্ক.
মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আজ রবিবার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন জমা দেন।
তিনি বলেন, ‘আসলে ২০০৯ সালে আইনটি হওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যকারিতায় সমাজে এক ধরনের ডিমান্ড তৈরি হয়েছে। ভেজাল, নকলের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে মানুষের এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া বাল্যবিবাহ রোধ, নকলমুক্ত পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভূমিকা ইতিবাচক। ফলে জনস্বার্থ বিবেচনায় রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ কারণে চেম্বার আদালতে হাই কোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে জানিয়ে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘আজই এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে গত বৃহস্পতিবার ওই রায় দেয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
তিনটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ ও ২০১২ সালে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টে একসঙ্গে ওই রায় আসে।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
ওই রায়ের পর এম এস আজিম জানিয়েছিলেন, ২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি ধারা-উপধারাকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট বলেছে, এ আইন বিচার বিভাগের স্বাধীনতারও পরিপন্থী।
‘মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই আইন সংশোধন বা নতুন আইন প্রণয়ন করে তার ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছে হাই কোর্ট।’
তিনি সেদিন জানান, তিন রিট আবেদনকারীকে মোবাইল কোর্ট আইনে দেয়া সাজাও বাতিল করা হয়েছে হাইকোর্টের ওই রায়ে।
তাদের মধ্যে একজনকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সরকারকে সেই টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
তবে এ আইনের অধীনে যেসব ক্ষেত্রে সাজা হয়েছে, সেগুলো অতীত বিবেচনায় মার্জনা করা হয়েছে রায়ে। যেসব সাজা উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে সেগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলবে।
মোতাহার হোসেন সাজু সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘হাইকোর্ট এই আইন পুরোটা বাতিল করেনি। যতগুলো ধারা, উপধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, সেগুলো অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব ধারা আদালত বাতিল করেছে, এরপরও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাবে কি না সেটা এখন সরকার ভেবে দেখবে। এখন বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করবে কিনা বা নতুন করে আইন হবে কি না সে সিদ্ধান্তও সরকারের।
গ্রাম্য সালিশ আইন ও মটর পরিবহন আইন অনুযায়ী পুলিশের জরিমানার বিধানের বিষয়টি এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ উদাহরণ হিসেবে এনেছিল, আদালত তা বিবেচনায় নেয়নি।
ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
আইনের ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯ ও ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা ও ১৩ ধারায় আপিল সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। আর ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারের ক্ষমতার বিধান রয়েছে।
রায়ের সার-সংক্ষেপে হাইকোর্ট বলেছে, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের এসব ধারা মাসদার হোসেন মামলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একইসঙ্গে সংবিধানের মৌলিক দুটি স্তম্ভ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির পরিপন্থী। তাই এ ধারাগুলোকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো।’
২০০৭ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ জারি করে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে এটিকে আইনে পরিণত করে। এরপর থেকে এটি ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ নামে পরিচিত।