ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি.
কৃষক মোহাম্মদ হুমায়ূনের ধান ক্ষেতে ব্লাষ্ট রোগ আক্রমন করেছে। এতে ধান চীটা এবং ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একারনে তিনি হতাশগ্রস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভ্রাম্যমান ফসল ক্লিনিকে আসেন কৃষক হুমায়ূন। ক্ষেতের কয়েকটি ধানের গাছ নিয়ে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন।
পীরহাটী গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ হুমায়ূন জানান, ব্যবসায়ীর পরামর্শে ধান ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। বিষয়টা নিয়ে হতাশাগ্রস্থ ছিলাম। মাইকে ইউনিয়ন পরিষদে ভ্রাম্যমান ডিজিটাল ফসল ক্লিনিকের কথা শুনে তিনি ধানের গাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে রবিউল জানান, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ব্লাষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও পরামর্শ লিখে দিয়েছেন।
সোমবার দিনব্যাপী মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ভ্রাম্যমান ডিজিটাল ফসল ক্লিনিকের আয়োজন করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই ক্লিনিকে ধান, মরিচ, বেগুন, মুগ ডাল, আম, লিচু, পুঁইশাক সহ বিভিন্ন ফসল এবং ধান চাষে ভারী বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রায় ফসলের ক্ষেত পরিচর্যায় কৃষকের করনীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদগণ পরামর্শ দিয়েছেন। তাছাড়া ডিজিটাল সার সুপারিশ, কৃষি কল সেন্টারে সেবা পাওয়ার পদ্ধতি এবং ই-কৃষি সম্প্রসারণ সেবা সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে ধুনট উপজেলায় ভ্রাম্যমান ডিজিটাল ফসল ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ক্লিনিকে কৃষকদের পরামর্শ দেন উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার মদক, আদম আলী খান, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, তাহেরা ইয়াসমিন, আব্দুস সোবহান, শাহিনুর ইসলাম ও উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মুনজুরুল ইসলাম।
মথুরাপুর ইউনিয়নের রামনারায়নপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের ধান গাছে পাতাপোড়া রোগ আক্রমন করেছে। অলোয়া গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া বাগানের আম প্রতিবছর ছিদ্রকারী পোকা আক্রমন করে। এবছর ছিদ্রকারী পোকার হাত থেকে আম রক্ষা করতে তিনি কৃষিবিদদের পরামর্শের জন্য এসেছিলেন ভ্রাম্যমান ডিজিটাল ফসলের ক্লিনিকে। অলোয়া গ্রামের তারা মিয়ার বাগানের লিচুতে মাকড় ধরেছে। এছাড়া পীরহাটী গ্রামের নুরুল ইসলামের মরিচ ক্ষেতে জাত পোকা আক্রমন করেছে। ফসলের ক্লিনিকে এসে কৃষিবিদদের থেকে তারা ফসলের জন্য চিকিৎসা ও পরামর্শ নিয়েছেন। এ ভাবে কৃষকের দৌড় গোড়ায় ফসলের চিকিৎসা দেওয়া হলে রোগ বালাই মুক্ত ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক তারা মিয়া।
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনর রশীদ সেলিম বলেন, ভ্রাম্যমান ডিজিটাল ফসল ক্লিনিক যুগান্তকারী উদ্যোগ। উপজেলা কৃষি অফিসার দক্ষ কৃষিবিদদের সঙ্গে নিয়ে কৃষকের কাছে এসে ফসলের চিকিৎসা দিয়েছেন। এতে কৃষকের সাথে কৃষি কর্মকর্তাদের সখ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আগামীতে কৃষকের মাঝে চাষাবাদে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়ার প্রবনতা বাড়বে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মানুষের যেমন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, একই ভাবে ফসলের চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু কৃষকের মধ্যে সচেতনতা না থাকায় তারা ফসলের চিকিৎসা নিতে যান না। একারনে ২০১৬ সাল থেকে ভ্রাম্যমান ডিজিটাল ফসল ক্লিনিকের মাধ্যমে কৃষকদের ফসলের চিকিৎসা দেওয়া হয়। মথুরাপুরে ২৪০জন কৃষক ফসলের চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা গ্রহণ করেছে।