মান্দায় ৪ পরিবার একঘরে

এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, মান্দা (নওগাঁ).

নওগাঁর মন্দায় মহাপ্রভূর সন্তুষ্টির জন্য ভোগ এর আয়োজন অনুষ্ঠানে একঘরে থাকা পরিবারের দু-জন স্বামী-স্ত্রী অংশ গ্রহন করায় এবার ঐ গ্রামে আরো একটি পরিবারকে একঘরে করে রাখলো গ্রামের সমাজ পতিরা। এনিয়ে ঐ গ্রামে গত ৪ বছরে মোট ৪ টি পরিবার সমাজচুত্য হয়ে একঘরে হওয়ার ঘটনা ঘটলো। একঘরে করে রাখার ঘটনাগুলো ঘটেছে জেলার মান্দা উপজেলার নুরুল্যাবাদ ইউনিয়নের রাম নগর হিন্দুপাড়া গ্রামে।
রাম নগর গ্রামের বিভূতি ভূষন জানান, গত ১৯ এপ্রিল মহাপ্রভূর সন্তুষ্টির জন্য (৬ শত লোকজনের জন্য) ভোগ অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয় আমার পরিবারের পক্ষ থেকে। ঐ মহাপ্রভূর ভোগ অনুষ্ঠানে পূর্ব থেকে একঘরে থাকা গ্রামের কালিপদ চন্দ্র ও তার স্ত্রী পারবতী রাণী অংশগ্রহণ করেন। একঘরে হয়ে থাকা পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ঐ দুজন আমাদের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করার অভিযোগ তুলে পরের দিন শুক্রবার সকালে গ্রামের তারাপদ নামের এক ব্যাক্তির বাড়িতে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে আমাকে ২৩ এপ্রিল নারায়ণের পূজা (প্রসাদ বিতরণ করতে) দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় গ্রাম্য মাতব্বর প্রধানরা। মাতব্বরদের দেয়া রায় মেনে রোববার ৫ কেজি প্রসাদ (বাতাসা) কিনে বিতরন করতে গেলে কীর্ত্তণ না দেয়ার অভিযোগ তুলে প্রসাদ বিতরণ করতে বাঁধা দেয় গ্রামের মাতব্বর প্রধানরা এবং ঐ রাতেই গ্রামের সুনীল তরফদার, বিনয় চন্দ্র, সত্যেন সহ গ্রামের লোকজন ও মাতব্বররা সালিশে বসে আমার পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘোষণা দেন এবং ঐ দিনই থেকে গ্রামের অন্য ৩ টি পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারকেও একঘরে করে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গ্রামের সব শ্রেণীপেশার মানুষজন সবাই সবার সাথে চলাফেরা, কথাবার্তা ও অনুষ্ঠান করতে পারলেও একঘরে করে রাখা ৪টি পরিবারের লোকজন গ্রামের লোকজনের সাথে চলাফেরা ও কথাবার্তা বলা সহ যে কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারবেনা।
এ সময় বিভূতি ভূষনের স্ত্রী অনিমা রানী (৪২) জানান, আমাদেরকে একঘরে করার পর থেকে বর্তমানে কেউ আমার সাথে কথা বলা ত দূরে থাক, মুখ পর্যন্ত দেখতে চায় না গ্রামের লোকজন এজন্য নিজেকে বড় অসহায় ও ছোট মনে হওয়া সহ মানসিকভাবে নানা যন্ত্রণায় ভূগছি বলে জানিয়ে একঘরে হওয়া থেকে মুক্তি পেতে চান অনিমা রানী ।
এসময় ইতিপূর্বে গ্রামের মাতব্বর প্রধান কর্তৃক এক ঘরে করে রাখা ৩ টি পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল চকপ্রমদ আরো কিছু তথ্য, ২০১৩ ইং সালের ডিসম্বর মাসে রামনগর গ্রামের গোপাল চন্দ্র প্রামানিক পরক্রিয়া প্রেমের সূত্র ধরে একই গ্রামের দ্বিজেন্দ্র নাথ এর স্ত্রী প্রতীকা রাণী (৩৫) কে পালিয়ে নিয়েি গয়ে বিয়ে করলে গ্রামে সর্ব প্রথম তাদের পরিবারকে একঘরে করে রাখেন মাতব্বররা। এরপর ঐ গ্রামের লিটনের স্ত্রী পারবতীকে কালীপদ চন্দ্র পরক্রিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ে করেন ফলে তাকেও একঘরে করে রাখেন গ্রামের মাতব্বর প্রধানরা।
প্রায় এক বছর পূর্বে গ্রামের মৃনাল চন্দ্র তার একমাত্র মেয়ে রাখী রাণী (১৯) নওগাঁ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিলে গ্রামের মাতব্বর প্রধানরা দাবী করে বলেন, গ্রামেই অনুষ্ঠান করে মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে এবং ভোজের আয়োজন করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। অপর দিকে বরের পিতা মৃনাল চন্দ্রকে জানিয়ে দেয় অনুষ্ঠান গ্রামের বাড়িতে নয় নওগাঁ কমিউনিটি সেন্টারে করতে হবে। একপর্যায়ে বর পক্ষের দাবির মুখে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান করে মেয়ের বিয়ে দেয় মৃনাল চন্দ্র । মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর থেকে মৃনাল চন্দ্রর পরিবারকে ও গত এক বছর ধরে একঘরে করে রেখেছে ঐ গ্রামের মাতব্বররা।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ