মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে : কফি আনান


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820

নিউজ ডেস্ক.


নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান।

    রাখাইন সংকট নিয়ে মিয়ানমার সরকার গঠিত কমিশনের প্রধান কফি আনান দেশটির আইন সংশোধন করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক স্বীকৃতি দেয়ার ওপরও জোর দিয়েছেন।

    শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের ইকোসক চেম্বারে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের এক বৈঠকে অংশ নেন কফি আনার।

    কফি আনান বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে।

    কফি আনান জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত অধিবেশনেই এই মতৈক্য হয়। সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ, উপদ্রুত এলাকায় অবিলম্বে আন্তর্জাতিক ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা এবং সব উদ্বাস্তুর নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সবাই একমত হয়েছে।

    আনান মিয়ানমার সরকারের আমন্ত্রণে গঠিত রাখাইন রাজ্য প্রশ্নে উপদেষ্টা কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই কমিশন গত আগস্ট মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ১০ দফা সুপারিশমালা পেশ করে। এই কমিশনের সভাপতি হিসেবে বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হয়ে কফি আনান পরিষদের সদস্যদের পরিস্থিতি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার এ রূপরেখা তুলে ধরেন।

    আরিয়া ফর্মুলার অধীনে আয়োজিত এই বৈঠক সদস্য রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজভুক্ত সংগঠনগুলোর জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে সেখানে সাংবাদিকদের থাকতে দেওয়া হয়নি। বৈঠক শেষে কফি আনান সাংবাদিকদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

    বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি ও দেশটির সামরিক উপদেষ্টা দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সামরিক তৎপরতা বন্ধ হয়েছে। সেখানে আর কোনো সহিংসতা নেই। তার কথায় সন্দেহ প্রকাশ করে কফি আনান বলেন, সহিংসতা যদি বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে এখনো দলে দলে মানুষ কেন দেশ ছাড়ছে? এর কারণ কি ক্ষুধা, সন্ত্রাসী দলের তৎপরতা, নাকি রোহিঙ্গাদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ভয়? কফি আনান জোর দিয়ে বলেন, কারণ যা-ই হোক, সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

    কফি আনান বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারটা অত সহজ নয়। রোহিঙ্গারা যদি নিরাপদবোধ না করে, তাদের জীবন আগের চেয়ে ভালো হবে, এটা ভাবতে না পারে, তা হলে তারা হয়তো ফিরে যাবে না।

    সাবেক মহাসচিব বলেন, যারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে, তাদের কোনো আশ্রয়শিবিরে রাখা যাবে না। নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যেতে দিতে হবে। নতুন জীবনের জন্য সব সহায়তা দিতে হবে।

    কফি আনান মনে করেন, রাখাইন কমিশনে যে সুপারিশমালা রয়েছে, এর ভিত্তিতে একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা সম্ভব। আর তা অনুসরণ করলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান অর্জন করা সম্ভব। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কমিশনের সুপারিশে সমস্যার মূল কারণ, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটি, সমাধানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আন্তসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সব জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণের কথাও এতে বলা হয়েছে।

    কফি আনান জানান, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি কমিশনের সুপারিশগুলো অনুমোদন করেছেন। কীভাবে সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা বিবেচনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছেন।

    আনান বলেন, রাখাইন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে যে ‘রোডম্যাপ’ রয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা বাস্তবায়নে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এই সংকট সমাধানে ব্যর্থতা শুধু মিয়ানমার ও তার প্রতিবেশীদের জন্য নয়; এর বাইরেও সংকট দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার তৈরি করতে পারে।

    যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্য দেশগুলোর প্রতিনিধরা মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়ে আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

    জাতিসংঘে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও অফিস অব দ্য হাই কমিশন অব হিউম্যান রাইটস, অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স, ইউএনএইচসিআর, ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও সভায় বক্তব্য রাখেন।

    বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বক্তব্য দেন।

    অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ