যে গেম খেলে আত্মহত্যা করেছে ১৩০ জন!

নিউজ ডেস্ক.

গত কয়েক মাসে রাশিয়া এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেছিল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিন মাসে মোট ১৬ জন তরুণীর আত্মহত্যার খবর পেয়েছিল পুলিশ। এত কম সময়ে এত জন তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনা বিস্মিত করেছিল পুলিশকে। সন্দেহ জাগে, এসব আত্মহননের হয়তো কোনো গোপন যোগসূত্র রয়েছে।
সম্প্রতি সাইবেরিয়ার দুই স্কুলছাত্রী য়ুলিয়া কনস্তান্তিনোভা (১৫) এবং ভেরোনিকা ভলকোভা (১৪) ১৪ তলা একটি বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে পুলিশ জানতে পারে, তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ফিলিপ বুদেকিন নামের এক ব্যক্তি। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিককালে আত্মঘাতী ১৬ জন তরুণীই ফিলিপের জন্য আত্মহত্যা করেছিলেন। পুলিশের ধারণা, বিশ্বে অন্তত ১৩০ জন মানুষের আত্মহননের জন্য পরোক্ষভাবে এই ফিলিপই দায়ী।
রাশিয়ার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২১ বছর বয়সী ফিলিপ রাশিয়ারই বাসিন্দা। সে ভিকোন্তাক্তে নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ব্লু হোয়েল সুইসাইড গেম’ নামের একটি সোশ্যাল গেমিং পেজের অ্যাডমিন। এই গেমে প্রতিযোগীদের মোট ৫০টি আত্মনির্যাতনমূলক টাস্ক কমপ্লিট করতে হতো। ভয়ঙ্কর ছিল সেসব টাস্ক।
সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছিল মোটামুটি সহজ, যেমন মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে ভূতের সিনেমা দেখা। কিন্তু গেমের লেভেল যত এগোতো, তত কঠিন ও ভয়ঙ্কর হতে থাকত টাস্কগুলো। একটি টাস্কে প্রতিযোগীকে নিজের শরীরে ৫০টি নিডল (ইঞ্জেকশনের সূচ) ফুটিয়ে সেই ছবি পোস্ট করতে হতো গেমিং পেজে। একেবারে শেষ অর্থাৎ ৫০তম টাস্কটিতে প্রতিযোগীকে নিজের প্রাণ হরণ করতে হতো।
                                                                  ফিলিপ বুদেকিন
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে রুশ পুলিশ জানায়, য়ুলিয়া এবং ভেরোনিকাসহ আত্মহত্যাকারী ১৬ তরুণীই সুইসাইড গেমে আসক্ত ছিলেন। তাদের জীবনে এই খেলা প্রায় উন্মাদনার পর্যায়ে পৌঁছেছিল। খেলায় বিজয়ী হওয়ার নেশায় তারা নিজেকে শেষ করে ফেলতেও দ্বিধা করেনি। পুলিশের ধারণা, শুধু ১৬ জনই নয়, গত কয়েক বছরে বিশ্বে ১৩০ জন এই গেম খেলতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
য়ুলিয়া, ভেরোনিকাসহ আত্মহননকারী অন্যান্য তরুণীর মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তারা প্রত্যেকেই সুইসাইড গেমের ৫০তম লেভেল পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। এই ৫০তম লেভেলেই প্রতিযোগীকে আত্মহত্যা করতে হয়। স্বভাবতই, পুলিশের সন্দেহ জাগে সুইসাইড গেম পেজের অ্যাডমিনের ওপর। কয়েকদিন আগে ফিলিপকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশের কাছে নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেছে ফিলিপ। তবে সে তার কাজকে ‘অপরাধ’ বলে মানতে নারাজ। তার বক্তব্য, সে তার খেলার মাধ্যমে সমাজের ‘শুদ্ধিকরণ’ ঘটাচ্ছিল। যাদের সমাজে বেঁচে থাকার কোনো অধিকারই নেই, তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়াই ছিল তার লক্ষ্য।
সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রিস্টি জেলে রয়েছেন ফিলিপ। তবে ফিলিপকে বন্দি করা গেলেও তার পেজটি নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। অ্যাডমিন গ্রেফতার হলেই সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পেজ বন্ধ হয়ে যায় না। আর বর্তমানে সুইসাইড গেম খেলাটি ব্রিটেনের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সূত্র: মিরর

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ