‘রানা প্লাজার ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার’

নিউজ ডেস্ক.

শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের প্রায় ৪২.২ শতাংশ এখনও বেকার রয়ে গেছে বলে ‘অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ’-এর ‘অবিস্মরণীয়, অমার্জনীয়: রানা প্লাজা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
রান্না প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে এখনও ৪২.৪ শতাংশ বেকার রয়েছেন বলে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে । ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই ঘটনায় আহতদের বেকার থাকার প্রধান কারণ শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা। তাদের এই মানসিক-শারীরিক দুর্বলতার জন্য ক্ষতিপূরণ না দেওয়া ও পুর্নবাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হওয়াকেই চিহ্নিত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ‘অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপক নুজহাত জেবীন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের ১৩ দশমিক ১ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। ৩০ দশমিক ৮ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক নয়। আবার গত ১ বছরে প্রায় ৯০ শতাংশ আহত শ্রমিক শারীরিক ও মানসিক কোনও চিকিৎসাই পাননি। নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা ছাড়া তাদের আর কোনও সঞ্চয় নেই। এ কারণে তারা আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দুঘর্টনায় আহত ১ হাজার ৪০৩ জন আহত ও নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৬০৭ জন নিয়ে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৫৭ শতাংশ আহত শ্রমিক নানা কাজে যুক্ত হয়েছেন। বেকার রয়েছেন ৪২ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিক। এছাড়া ২৬ শতাংশ শ্রমিক পরিকল্পনার অভাবে কোনও কাজে যুক্ত হতে পারছেন না।
অনুষ্ঠানে ‘অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ’-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘চার বছর পরও এত বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের এই অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর ফলে তারা আরও দারিদ্র্যের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের যেভাবে আর্থিক সহয়তা দেওয়া হচ্ছে, তা দিয়ে তারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারছেন না। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে, পুনরায় কাজে ফিরতে তারা ভয় পাচ্ছেন। চার বছরেও তাদের নিয়ে যদি ভিন্ন পরিকল্পনা করতে না পারি, তা হবে আমাদের জন্য খুব হতাশাজনক।’
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক টুয়োমো পাউতিয়ানেন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, যেখানে মনোসামাজিক সহায়তা দিতে হবে। সরকারকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
রানা প্লাজা ধসের পর সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একত্রে কাজ করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ছিল উল্লেখ করে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড. আনোয়ার উল্লাহ বলেন, ‘সমস্যা পরিকল্পনায়। রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে, তাও পর্যাপ্ত কিনা, তা চিন্তার বিষয়। সরকার কারখানা নিরাপত্তার নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই কিছু কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটিকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের চেয়ারপারসন ড. খলিলুর রহমান, ওয়ার্কার্স সেফটি ফোরামের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক টো পোটিয়াইনেন, সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক কে জি মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর ওয়ার্কার্স সেফটির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর পল এলওয়ার্ড রিগবি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রসঙ্গত, অ্যাকশন এইড ২০১৩ সাল থেকে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আহত ও মৃত শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে সেখানে থাকা ৫টি তৈরি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে গুরুতর আহত পঙ্গু হন কয়েক হাজার শ্রমিক।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ