রোমাঞ্চকর ম্যাচে পুনেকে কাঁদিয়ে রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই

ক্রীড়া ডেস্ক.

১২৯ রানের পুঁজি নিয়ে আইপিএলের শিরোপা জিততে পারে কেউ, কল্পনাও করা অসম্ভব। যেখানে এবারের আইপিএলের সবচেয়ে বড় চমক ছিল রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্ট। সবাইকে অবাক করে দিয়ে কোয়ালিফায়ারে উঠেছিল তারা। ওই ম্যাচে সাবেক চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে হারিয়ে সবার আগে ফাইনালে উঠেছিল স্টিভেন স্মিথের দল। আর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দশম আসরে রবিবারের ম্যাচে ম্যাচে সেই পুনেকে কাঁদিয়ে ১ রানের জয় নিয়ে রেকর্ড তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো মুম্বাই।
সাবেক ক্লাব চেন্নাই সুপার কিংস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সকে টপকে রেকর্ড তিনবার শিরোপা হাতে নিয়েছে মুম্বাই। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। আর প্রথমবার ফাইনালে উঠে জয়ের আশা জাগিয়েও আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে পুনেকে। অথচ চলতি আসরে ফাইনালের আগের তিনবারের দেখায় সবকটিতেই মুম্বাইকে হারিয়েছিল পুনে।
শেষ ওভারের নাটকীয়তায় শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ১ রানের জয় পেয়েছে মুম্বাই। অবশ্য শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটা খুব সহজ হয়নি মুম্বাইয়ের জন্য। হায়দ্রাবাদের রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে রোহিত শর্মার মুম্বাই নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৮ উইকেটে ১২৯ রান তুলতে সমর্থ হয়। ১৩০ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের ব্যাটে চড়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল পুনে। কিন্তু দলীয় ১২৩ রানের মাথায় মনোজ তিওয়ারি ও স্মিথ আউট হয়ে হলে সেই স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায় পুনের। শেষ পর্যন্ত তারা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১২৮ রানে থামে তাদের ইনিংস।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। জয়দেব উনাদকাটের জোড়া আঘাতে শুরুতেই হোঁচট খায় মুম্বাই। দলীয় ৮ রানেই বিদায় নেন দলটির দুই ওপেনার। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। মাত্র ৭৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। শঙ্কা তৈরি হয়েছিল একশ রানের নিচেই গুটিয়ে যাওয়ার। তবে একপ্রান্ত আগলে লড়াই করে যাচ্ছিলেন ক্রুনাল পান্ডিয়া।
অষ্টম উইকেটে মিচেল জনসনকে সঙ্গে নিয়ে মান বাঁচিয়েছেন দলের। শেষ ৫.৫ ওভারে ৫০ রানের জুটি গড়েছেন দুজনে।
৩৮ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে হার্দিক পান্ডের ৪৭ রানই মুম্বাইয়ের সেরা ইনিংস। উনাদকাট ও জাম্পার সমান ২ উইকেট পান ড্যানিয়েল ক্রিস্টিয়ান। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এতো অল্প পুঁজি নিয়েও শেষ ওভারের নাটকীয়তায় জয় পেয়েছে মুম্বাই।
অথচ আজিঙ্কা রাহানে ও স্মিথের ব্যাটে শিরোপার সুবাস পাচ্ছিল পুনে। কিন্তু সব বদলে যায় ১৬.২ ওভারে মহেন্দ্র সিং ধোনির আউটের পর। তার আগে রাহানে ৩৮ বলে ৪৪ রান করে জয়ের আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ধোনি মাত্র ১০ রানে যশপ্রীত বুমরার শিকার হলে পিছিয়ে পড়ে পুনে। তখনই মূলত ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়।
বুমরার সঙ্গে লাসিথ মালিঙ্গা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলে শেষ ওভারে পুনের দরকারি রান দাঁড়ায় ১১। শেষ ওভারে বল হাতে নেন মিচেল জনসন। তার প্রথম বলে মনোজ তিওয়ারি বাউন্ডারি মেরে পুনের দর্শকদের উল্লাসে মাতান। তবে পরের বলেই লং অনে পোলার্ডকে ক্যাচ দেন তিনি।
তারপরও ক্রিজে স্মিথ অপরাজিত থাকায় জয় ভিন্ন কোনও চিন্তা করেনি পুনে। কিন্তু ৫০ বলে ৫১ রান করে অধিনায়ক ধরা পড়লেন রাইডুর হাতে। স্মিথের বিদায়ে শেষ হয়ে যায় পুনের জয়ের স্বপ্নও।
শেষ ৩ বলে ৭ রান দরকার ছিল পুনের। চতুর্থ বলে বাই থেকে একটি রান নেন ওয়াশিংটন সুন্দর। পঞ্চম বলে হার্দিক ক্যাচ ফেলে দিলে ক্রিস্টিয়ান দৌড়ে নেন দুটি রান। শেষ বলে জয়ের জন্য পুনের প্রয়োজন ছিল ৪ রান। তবে মিচেল জনসনের করা বলটিতে ড্যান ক্রিস্টিয়ান ২ রানের বেশি নিতে পারেননি। তৃতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে যান।
ফলে ১ রানের জয় পায় মুম্বাই। সেই ওভারেরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে তিওয়ারি ও স্মিথকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন জনসন। সবমিলিয়ে ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার। এছাড়া জসপ্রিত বুমরাহ নিয়েছেন ২ উইকেট। পুনের পক্ষে অধাইন্যক স্মিথ সর্বোচ্চ ৫১ ও আজিঙ্কা রাহানে ৪৪ রান করেছেন।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ