লালমনিরহাটে আড়াই কোটি টাকা নিয়ে উধাও নারী উন্নয়ন সংস্থা

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট থেকে.

নারীদের উন্নয়নের কথা বলে “নারী উন্নয়ন প্রকল্প”। এই প্রকল্পের কথা বলে আদিতমারীতে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রলোভন দিয়ে হতদরিদ্র মহিলাদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা নিয়ে রাতারাতি উধাও হয়েছেন “নারী উন্নয়ন প্রকল্প” নামের একটি প্রতারক সংগঠন। এ ঘটনায় আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আদুরী বেগম নামের একজন ভুক্তভোগি মহিলা।
জানা গেছে, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আদিতমারী উপজেলার ফায়ার সার্ভিস অফিস সংলগ্ন জনৈক নুর মোহাম্মদ এর বাসা ভাড়া নিয়ে অফিস খুলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত “নারী উন্নয়ন প্রকল্প” (রেজি নং-ঝ- ১০২৭২- ২০০৯) নামের একটি সংগঠন। যার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা বলে উল্লেখ করা হয়। সাইন বোর্ডে প্রধান কার্যালয় ৫০,ডি,ইনার সার্কুলার ভি,আই,পি রোর্ড, নয়া পল্টন (৫ম তলা) ঢাকা-১০০০ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যক্রম শুরুর পূর্বে প্রকল্পের সমন্বয়কারী এস আলম স্বাক্ষরিত কার্যক্রমের অবগতি করণ প্রসংগে লালমনিরহ্টা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেন।
যার অনুলিপি চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা ঢাকা, পুলিশ সুপার, ইউএনও, সমাজ সেবা অফিসার ও অফিসার ইনচার্জ কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও আদিতমারীকে সদয় অবগতির জন্য প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা একটি অরাজনৈকিত, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী, মানব কল্যাণমূলক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। নারী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানব গোষ্ঠীকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলে তাদের দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বীতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় শুরু করা হচ্ছে। এ ধরনের একটি চিঠি প্রশাসনকে দিয়ে তারা কার্যক্রম শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে প্রতারক চক্রটি ৫ প্রকার হস্তশিল্পের কাজ শেখানোর কথা বলে ৩৫ জন মেয়েকে তাদের কার্যক্রমের ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রতিজন ট্রেইনারের আওতায় ১৫টি দল গঠন করা হয়। প্রতিটি দলে কমপক্ষে ৩০ জন করে সদস্য ভর্তি করা হয়। প্রত্যেক সদস্যদের ভর্তির জন্য এক হাজার ৪শ ৩০ টাকা টাকা করে নেয়া হয়। আর প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে একটি করে সেলাই মেশিন কিস্তিতে প্রদান করা হবে মর্মে নারী উন্নয়ন প্রকল্প শুধু আদিতমারীতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত বুধবার (১০ মে) অফিসে তালাবদ্ধ করে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
পরদিন ট্রেইনাররা অফিসে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পেলে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। নারী উন্নয়ন প্রকল্পের ট্রেইনার হিসেবে কাজ করা পারভীন আক্তার, সুলতানা, আদরী ও রেজিয়া জানান, প্রকল্প সমন্বয়কারী এস আলমের কথা মত গ্রামের গরীব মানুষের প্রশিক্ষণের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে এক হাজার ৪শ ৩০টাকা করে নিয়ে অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। তারা আরও জানান, রাতারাতি পালিয়েছে ওরা, আর বিপদে পড়েছি আমরা।
আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যার আইয়ুব আলী জানান, “নারী উন্নয়ন প্রকল্প” নামের ওই প্রতারক সংগঠনটি কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও আদিতমারী উপজেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে জানতে পেরেছি।
নারী উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী এস আলমের মোবাইল (০১৭৭০৮৬১৮৮৯) ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি হরেশ্বর রায় অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসাদুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ