শিগগিরই হাওর পরিস্থিতির উন্নতির আশা

নিউজ ডেস্ক.

আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার হাওর অঞ্চলে এখন চলছে হাহাকার। বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে হাওরের মানুষ।
তবে সরকারের নানা অনুদান ও পরিকল্পনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা মিয়া বলেন, হাওর অঞ্চলের মানুষের প্রকৃতিকে মোকাবেলা করার নিজস্ব একটা শক্তি আছে এবং তারা শত শত বছর ধরে তা করে আসছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের এলাকা ত্যাগ করে শহরে কাজের জন্য ছুটে যায়নি।
তিনি বলেন, সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবছর যে মাছ উৎপাদন হয় তার সঙ্গে তুলনা করলে খুব বেশি হলে এই দুর্যোগে শতকরা ১০ ভাগের মতো মাছের ক্ষতি হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের নিজেদের হাওর এলাকায় অবস্থান করছেন এবং তাদের জীবন ও জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক করে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।
মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, সুনামগঞ্জের ৮৪টি হাওরে মোট ৪৯ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ করে আরো বেশি মাছ উৎপাদন করা যাবে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ব্যাপক আশাবাদের মাঝেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন অপেক্ষা করে আছেন আগামী এপ্রিল মাসের বোরো ধানের জন্য। কারণ বছরে তাদের একমাত্র ফসল বোরো ধান এ বছর সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে।
বন্যায় সম্পূর্ণ ফসল ও ঝড়ে টিন শেডের একটি ঘর হারিয়েছেন বিল্লাল মিয়া। তিনি বলেন, আমি এখন কাঁদতে পারি না। আমরা এখন দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। দয়া করে আপনি লিখুন, সরকার যেন আমাদের জন্য আরো বেশি কিছু করে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাওরবাসীর প্রতি ভালোবাসার জন্য তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এর আগে ৯১ বছরের বৃদ্ধ মহিম দাস বলেন, তাদের ফসল বিনষ্ট হওয়ায় খাবার ও জীবনযাত্রায় তারা অথৈ পানিতে সাঁতার কাটছেন। তারা আগামী বছর পর্যন্ত কোনো আশার আলো দেখছেন না।
বৃদ্ধ এই ব্যক্তি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও অর্থ সাহায্য তাদেরকে রক্ষা করতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষেরা সরকারের কাছে আগামী এক বছর তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা ও দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন শাল্লা উপজেলার তকদির বলেন, হাওর অঞ্চলে ইকো-ট্যুরিজম দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার অন্যতম বন্যাদুর্গত এলাকা শাল্লা পরিদর্শন করেছেন এবং হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য যথাসাধ্য সহযোগিতা করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে কৃষি ঋণের সুদে ছাড় প্রদান, সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ, চাল ও নগদ টাকা বিতরণ, বিদ্যুতে সাবসিডি প্রদান এবং হাওর অঞ্চলকে অর্থনৈতিক সম্পদে পরিণত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ।
সরকারি সূত্র জানায়, এই বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার ৬২ উপজেলার ৮ লাখ ৫০ হাজার ৮৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ