আবু জাহের, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি.
বগুড়ার শেরপুরে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে নিত্য নতুন মিল চাতাল ও বয়লার। এতে মানা হচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনা নিয়ম। যার ফলে হচ্ছে পরিবেশ, বায়ু দুষণ বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকি। অনুসন্ধানে দেখা যায় উপজেলা প্রায় প্রতিটি মিল চাতাল তৈরিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম নীতি না মেনে যত্র যত্র গড়ে তুলছে এসব মিল চাতাল ও বয়লার। সপ্তাহে প্রায় ৩ দিন ভোর বা বিকেল হলেই দেখা যায় চাতালে ধান সিদ্ধ করতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঁঠ ও ধানের কুঁড়া। যার দরুন সকালের স্বাস্থ্যকর ¯িœগ্ধ মনোরম বাতাসের বদলে ঘুম থেকে উঠেউ দুষিত পরিবেশে চলাচল ও শ্বাস গ্রহন করতে হয় স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রি ও এলাকাবাসীর। এই কাঠ কুঁড়ার ছাই বাতাসে মিশে তৈরি করেছে কালো ধোঁয়ার আস্তর যা উড়ে বাড়িঘর এবং গাছপালার ওপর তৈরি করছে কালচে আবরণ। বাতাসে ভেসে বেড়ানো ছাই স্থানীয় বাসিন্দা, আশেপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্বাস্থসেবা ক্লিনিকের উপর পরছে বিরুপ প্রভাব। উপজেলার শাহবন্দেগী, মির্জাপুর, কুসূম্বী, খামারকান্দী ও ভবানীপুর ইউনিয়নের অবস্থিত চাতালগুলোতে এভাবে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন চাতাল ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজ চলে। ওই সব গ্রামের এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিকেলের পর থেকে চাতালগুলোতে ধান সিদ্ধ করা শুরু হয় এ সময় ধানের কুঁড়ার ছাই শ্বাসনালিতে ঢোকাসহ চোখে-মুখে এসে পড়ে ফলে মির্জাপুর থেকে ধুনটমোড় পর্যন্ত ঢাকা বগুড়া মহাসড়কে গাড়ী চলালে ব্যপক সমস্য ও দূর্ঘটনা সৃষ্টি হয়। এমনকি বাতাসের সঙ্গে ঘরের ভেতরেও ভেসে বেড়ায় ছাই। স্থানীয় চিকিৎসক শাহ আলী বলেন, বাতাসে ছাই ভেসে বেড়ানোয় ওই সব এলাকায় চাতাল শ্রমিকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও শ্বাসজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুুগছে ও চিকিৎসকের কাছে রোগীদের ভিড়ও বাড়ছে। স্থানীয় চালকল মালিক সমিতি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী উপজেলার ওই সব ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে মিল-চাতাল রয়েছে ৩৭৫টি এসব চাতালে প্রায় ৫ হাজার নারী-úুরুষ শ্রমিক কর্মরত। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়েই তাঁদের সমিতির সদস্যরা মিল চাতাল বানিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে সমিতির সদস্য ছাড়াও কোন অনুমতি ছাড়াই ধান সিদ্ধ ও শুকানোর জন্য উপজেলায় প্রায় ২০০ চাতাল মিল রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। সরেজমিনে গিয়ে বিকেলে দেখা যায়, উপজেলার ধুনটমোড় থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত মহাসড়ক দিয়ে চলাল করাও কঠিন হয়ে পড়ে রাস্তার পার্শ্বে সাড়িবদ্ধ মিল চাতালের ছাই বাতাসে ভেসে বেড়ানোর জন্য। উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকায় চাতালে ধান সিদ্ধ ও শুকানোর কাজ চলছে এবং এতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা ধানের কুঁড়া বাতাসে ছাই হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। উপজেলার শেরুয়া এলাকার চাল ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন স্বীকার করেন বয়লারে ধান সিদ্ধ করার সময় জ্বালানি হিসেবে ধানের কুঁড়া ব্যবহার করা হয়। এই কুঁড়ার ছাই বাতাসের সঙ্গে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বিকেলের পর থেকে উপজেলার শেরুয়াসহ আশপাশের এলাকার বাতাসে ছাই ভাসতে থাকে ধান সিদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত চাতালশ্রমিক উপজেলার শুভগাছা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন সংসার চালাতে চাতালে কাজ করেন। কিন্তু অতিরিক্ত ছাই ও রোদের কারণে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। চাতাল মালিকরা এসব অসুস্থতায় চিকিৎসার খরচে কোনো সহযোগিতাই করেননা শুভগাছা গ্রামের আরেক নারী চাতালশ্রমিক কুলসুম বেগম বলেন, চাতালে কাজ করা বেশির ভাগ শ্রমিক ছাইয়ের কারণে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে থাকেন অনেক শ্রমিককেই রোগশোকে চিকিৎসার খরচ জোগাতে সূদে ঋণ নিতে হয়। কাফুড়া পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন বাতাসে ভেসে ছাই ঢুকে পড়ে বসত ঘরেও এ ছাইয়ের কারণে বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের সমস্যা পরিবেশ অধিদপ্তর দেখে থাকে তাছাড়া উপজেলার ধানের বয়লার ও মিল-চাতালকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সমস্যা নিয়ে তাঁর দপ্তরে কখনও অভিযোগও পাননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

