Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820
আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত
আবু জাহের, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি.
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বগুড়ার শেরপুরের সীমান্তবর্তী বথুয়াবাড়ী বাঙ্গালী নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। নদীতে একাধিক শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন ও জোরপূর্বক আবাদি জমির মাটি বিক্রির কারণে শত শত বিঘা কৃষি জমি বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হওয়াসহ হুমকীর মুখে বসতবাড়ী। আর এই বালু উত্তোলনকে আড়াল করতে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে জানান তারা আদালতের আদেশকে সম্মান জানিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, শেরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বথুয়াবাড়ী গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে প্রভাবশালী ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিক্তা কন্সট্রাকশনের মালিক গোলজার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে বাঙালী নদীতে একটি ৬ ছ্যালেঞ্চার, ৪টি ৩২ হর্সপাওয়ার শ্যালো মেশিন ও ১টি ৪০ পাওয়ারের শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। অব্যাহত বালু উত্তোলন করার পাশাপাশি ওইসব এলাকা থেকে বর্তমানে মাটি কেটে ট্রাক যোগে বিক্রি করছে বালু মহলের একটি সিন্ডিকেট। ফলে ওইসব এলাকার শত শত বিঘা কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি ও স্থাপনাও এখন হুমকীর মুখে রয়েছে।
এদিকে বালু ব্যবসায়ীরা আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে ওই নদীর অভিযুক্ত স্থানে অদ্যবধি তাদের বসানো ড্রেজার মেশিন রেখে দিয়ে তীরবর্তী আবাদী জমি ও বসতীদেরকে নানা হুমকী-ধামকি দিয়ে আসছে।
এদিকে ঘটনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে একটি মামলা করে। ওই মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ২২ অক্টোবর বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ী, বিলকাজুলী, শাকদহ এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে বাঙ্গালী নদীতে অবস্থিত বাথুয়াবাড়ি বালু মহল বগুড়া জেলাধীন বালু মহলের তালিকা থেকে কেন বাদ দেয়া হবে না এবং বাঙ্গালী নদীকে আইনবহির্ভূত ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন থেকে রক্ষার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না এবং কেন উল্লেখিত নদীর পরিবেশ ব্যবস্থা ও নদীর তীরবর্তী কৃষি জমি, বাড়িঘর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতি সাধনের দায়ে ইজারাদারের কাছ থেকে কেন ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদী ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, পরিবশে অধিদপ্তরের (রাজশাহী বিভাগ) পরিচালক, ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ধুনটের সহকারী কমিশনার (ভূমি), ধুনট সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং বালু উত্তোলনকারী বথুয়াবাড়ি গ্রামের মেসার্স রিক্তা কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী গোলজার হোসেনদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে আদালত।
অপরদিকে আদালতে আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য ওইসব বালু ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি বালু উত্তোলন করা হচ্ছেনা মর্মে সংবাদ সম্মেলন করে।
রোববার বিকালে সরেজমিনে গেলে ধুনট উপজেলার বিলকাজুলী গ্রামের নিরাঞ্জন, নজরুল, জমিস উদ্দিন, আমিনুল, আছের উদ্দিন, বিশ্বনাথ, আলতাব হোসেন, আতাউর রহমান, মনিরুল ইসলামসহ একাধিক গ্রামবাসীরা জানান, বালু ব্যবসায়ীরা তাদের বালু মহলের ইজারাভুক্ত জায়গা ব্যতিরেকে নদীর তীরবর্তী অন্যস্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন পূর্বক বিক্রি করছে। তবে আদালত থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা দেয়ায় ব্যবসায়ীরা বর্তমানে আবাদী জমির মাটি কেটে ট্রাক যোগে অহরহ বিক্রি করছে।
স্থানীয় লোকজন আরো অভিযোগ করে বলেন, বাঙ্গালী নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিলেও প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। তারা নদীতে ৬টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রেখেছে যেকোন সময় আবারো বালু উত্তোলন করবে।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি হাতে না পেলেও ইজারাদারকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ওইসব স্থান থেকে বালুর পাশাপাশি মাটি কাটা বা উত্তোলনের খবর জানিনা। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।