শেরপুরে সাহেববাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820

আবু জাহের. শেরপুর (বগুড়া) থেকে


    আমাদের শেষ সম্বল বসত ভিটা কি রক্ষা হবেনা ? আমরা কি স্বাভাবিক ভাবে অন্য মানুষদের মত বাঁচতে পারবোনা ? বাঙ্গালী নদীর কড়াল গ্রাস হতে আমাদেরকে কেউ রক্ষা করবেনা ? -এমনি নানা প্রশ্ন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সাহেববাড়ী বাঁধ এলাকার মানুষের মনে।

    বন্যায় সময় আসলে অনেকেই পরিদর্শনে গিয়ে আশার কথা শুনিয়ে চলে যান, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। শেষে আবারো ভাঙ্গন, আবারো বাড়ী ঘর নিয়ে বিপাকে পরা, এই নিয়েই চলছে সাহেববাড়ী বাঁধ এলাকার মানুষের জীবন। এবারো উপজেলার সাহেববাড়ী বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বাঁধ এলাকার মানুষজন বাঁশ ও বিভিন্ন গাছের ডাল দিয়ে সাময়িকভাবে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। ইতিমধ্যেই ১০/১২ টি বাড়ী নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। আর বেশ কয়েকবছর পূর্বেই বাঁধের পুরো অংশই বাঙ্গালী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ী ঘড় অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। আর যাদের যাবার কোন জায়গা নেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই খানেই বসবাস করছেন। তবে নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবং ভাঙ্গা এলাকার ভিতরে পানি প্রবেশ করলে বগুড়া, সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাবার পাশাপাশি ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সাহেববাড়ী বাঁধটি ৮/১০ পূর্ব থেকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে গত ২বছর পূর্বেই বাঁধের পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে। ফলে বাধ সংলগ্ন বসতবাড়ী ভিটা একের পর এক নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে। অনেকেই তাদের বাড়ীর ভিটা হারিয়ে এখন অন্যত্র উদ্বাস্তু হয়ে জীবন যাপন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ দিনের ব্যবধানে আরো ১০/১২টি বাড়ী নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন এলাকাটি পরিদর্শন করে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধটি রক্ষার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যেই বাঁধটি সহ পুরো রাস্তা, ঈদগাহ মাঠ সহ বেশ কিছু বাড়ী ঘড় ও ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবারের বন্যার শুরুতে বাঁধটিতে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিলেও সরকারি কোন সহযোগীতা সেখানে পাননি বলে এলাকাবাসি অভিযোগ করেন। তারপরেও এলাকাবাসি তাদের নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী কোন রকমে বাঁধটির সাথে বাড়ী ঘড় সহ ফসলি জমি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি বাড়ী ঘড় অন্যত্র সড়িয়ে নিয়েছেন। কিন্ত হঠাৎ করেই আবারো অতি বৃষ্টির কারনে মানুষজন আতংকিত হয়ে পরেছে।

    নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়া বাড়ীর মালিকদের মধ্যে অন্যতম হলো মাসুদ, ছামেনা, পচি, সুখী, আখের আলী, মোজাম, মোলাম, ছাত্তার, বকুল, মোজা, ফুলপরি। মোজাহার আলী, আব্দুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম সহ একাধিক ব্যাক্তি বলেন, বেশ কয়েক বছর হলো প্রতিবছরই আমরা শুনি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধটি নতুন করে নির্মানের পাশাপাশি এলাকার মানুষজনকে রক্ষা করা হবে। কিন্ত নদীতে পানি বৃদ্ধি পায় আর সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা এলাকায় এসে পরিদর্শন করে আমাদের নতুন নতুন আশ্বাস দেন। এভাবে প্রায় ১০/১২ বছর হলো শুধু আশ্বাস ছাড়া অন্য কোন কাজ হয়নি। তারা আরো বলেন এই ভিটামাটি চলে গেলে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাইটুকু হারিয়ে যাবে।

    বিনোদপুর গ্রামের অধিবাসি রেজাউল করিম মাষ্টার ধুনট বার্তাকে জানান, আমরা আশা করেছিলাম এবার অন্তত বাঁধটির কাজ দেখতে পাবো। কিন্ত ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বাঁধের সাথে বেশ কিছু বাড়ী ঘড়, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবারের ভাঙ্গনে এলাকার মানুষ আরো বেশি আতংকিত হয়ে পরেছে। কেননা এই ভাঙ্গনের হাত থেকে আদৌ এই এলাকার লোকজন রক্ষা পাবে কিনা তা ভবিষ্যতেই বলে দেবে।

    ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন ধুনট বার্তাকে জানান, প্রতিবছরই নতুন করে বাড়ী ঘড় নদীতে বিলীন হলেও কোন প্রতিকার না হওয়ায় এলাকার মানুষ আতংকিত হয়ে পরেছে। এই বাধটি নির্মান না হওয়ায় বিনোদপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে ৫ কিলোমিটার ঘুরে কুর্নিঘাট দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এমনকি তাদের জমির ফসল আনা নেয়া করতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।

    সুঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ছাইদ ধুনট বার্তাকে জানান, ওই স্থানে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রয়োজন। প্রতিবছরই ভাঙ্গনের কারনে এলাকার লোকজন বেশ ক্ষতির মুখোমুখী হতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিনোদপুর গ্রামের লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে জানানো হয়েছে।

    অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ