সিরাজগঞ্জের কৃষকের ভরসা আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা প্রকল্প


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820

আব্দুল হালিম লাভলু ,সিরাজগঞ্জ থেকে.


সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জে প্রতিবছর অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কৃষকের ফসলহানি হয়। এর ফলে কৃষকেরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হন তা মেটাতে সরকারের সরাসরি কোন উদ্যোগ নেই। তবে চলতি বছর পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক শস্য বীমা প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান সাধারন বীমা করপোরেশন জেলার কৃষকের ক্ষতিপূরন করেছে।


    অনেক কৃষকের ভরসা তাই শস্য বীমা প্রকল্প। বীমাকৃত জমির ফসলের ক্ষতিপুরণ পাওয়ায় কৃষকরা দারুন খুশি । দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ সব ধরণের ফসলের ওপর এই ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে চালু করার দাবি কৃষকদের।

    সরেজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেল বোরো মৌসুমে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, কামারখন্দ,কাজিপুর,রায়গঞ্জ,শাহজাদপুর,তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষকদের মধ্যে পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে ফসলের ক্ষতি পূরনে এই প্রথম শস্য বীমা চালু করে রাষ্ট্রায়াত্ব সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ।
    প্রাথমিকভাবে জেলার প্রতি কৃষকের এক বিঘা করে মোট ৫০০ জন কৃষকের ৫০০ বিঘা জমির অনুকুলে ৫০০ টি আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্যবীমা পলিসি ইস্যু করা হয় । এতে কৃষকদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ২৫০ টাকা প্রিমিয়াম গ্রহণ করা হয় এবং প্রতি প্রিমিয়ামের অনুকূলে সরকারীভাবে ভুর্তুকিও দেয়া হয় ২৫০ টাকা । ৫০০ বিঘা জমির প্রিমিয়াম হিসেবে আয় হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।
    এই প্রকল্পটি চালুর প্রথম বছরেই আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্যবীমা পলিসি এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার আবহাওয়া অফিসের মাধ্যমে দূর্যোগ কবলিত এলাকার ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির হার ও পরিমান নিরূপন করা হয়। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের শস্য বীমা পলিসির শর্ত অনুযায়ী প্রত্যেক কৃষককে গত শনিবার কামারখন্দে এক অনুষ্ঠানে সাড়ে সাত হাজার করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। ২৫০ টাকা জমা দিয়ে শস্য বীমা পলিসি করার ফলে এক ফসলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নগদে সাড়ে সাত হাজার করে টাকা পেয়ে কৃষকরা মহাখুশি।
    জেলার কামরখন্দ উপজেলার পুরান দোগাছী গ্রামের কৃষক শাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রথমদিকে তারা বীমা করতে আগ্রহী ছিলো না কারণ অনেক বীমা প্রতিষ্ঠান বীমা করার পরে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এই কারণে বীমার প্রতি আস্থা ছিলো না । কিন্তু এলাকার বেসরকারি সংস্থা এনডিপি আমাদের আশ্বাস দেয়ায় আমরা বীমা করি। এখন ক্ষতিপুরন পাওয়ায় আমাদের এলাকার কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। সব কৃষক এখন আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা পলিসি করতে চায়।
    একই উপজেলার ছোট ধোপাকান্দি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান শস্য বীমা করে এক বিঘা জমির ফসলের ক্ষতিপুরণ বাবদ তিনি সাড়ে সাত হাজার টাকা পেয়েছেন । তিনি বলেন, বীমা ওয়ালারা ক্ষতিপূরণের টাকা দেবে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নাই। এখন টাকা পেয়ে আমার সে ধারনা দুর হয়েছে ।
    সরকার যদি সব ফসলের ওপর বীমা চালু করে তাহলে কৃষকদের উপকার হবে । তাড়াশ উপজেলার গোয়াল গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান রাজু জানান এই প্রকল্প কৃষকের ভাগ্য খুলে দিয়েছে । আমরা চলনবিল এলাকার মানুষ ্প্রতি বছরই বন্যা বৃষ্টি খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের ফসলের ক্ষতি হয় । এতে কৃষকের কোমর ভেঙ্গে যায় । পরবর্তীতে চড়া সুদে লোন নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না । বাধ্য হয়ে লোন নিয়ে আবাদ করলে ফসল তুলে লোন পরিষোধ করলে কৃষকের কিছু থাকেনা এবং তাদের লোনও পরিশোধ হয়না । এই বীমা স্থাযীভাবে চালু করার দাবি জানান তিনি।
    এ ব্যাপারে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের আবহাওয় ও শস্য বীমা প্রকল্পের পরিচালক ওয়াসিফুল হক জানান, কৃষি প্রধান বাংলাদেশে প্রতি বছরই অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, ঘুর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় । এতে কৃষি- অর্থনীতিসহ দেশে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয় । এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে কৃষকদের রক্ষার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অনুদানে সাধারণ বীমা করপোরেশন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও নোয়াখালীতে পরীক্ষামুলক ভাবে এই প্রকল্প চালু করেছে । পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কৃষকদের জন্য এই প্রকল্প স্থায়ীরূপ দেয়ার ব্যবস্থা করতে চায় কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো জানান ভারত পাকিস্তানসহ পৃথিবীর অনেক দেশে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা চালু করে কৃষকদের সুরক্ষা দিয়ে কৃষি অর্থনীতিকে উন্নত ও টেকসই করা হয়েছে। আমাদের দেশেও কৃষি অর্থনীতিকে উন্নত ও টেকসই করা যায় কিনা তার জন্য পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
    এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী বলেন, প্রতি বছরই কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয় । জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে এই ক্ষতির আশংকা আরো বেড়ে যাচ্ছে। এ বছরও সিরাজগঞ্জ জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে ২৯১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারিভাবে যে ক্ষতিপুরন দেয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয় বলেও তিনি জানান । স্থায়ীভাবে শস্য বীমা চালু হলে কৃষকরা লাভবান হবে । চাষাবাদে কৃষক সাহসী হবে। দেশে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে কৃষি অর্থনীতি মজবুত হবে বলে তিনি মত দেন।
    উল্লেখ্য যে, বীমাদাবী পুরণ উপলক্ষে গত শনিবার সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নির্বাহী অফিসার আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলীর উপস্থিতিতে ৭টি উপজেলায় ৫০০ জন কৃষকের ৫০০ বিঘা জমির ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ বীমাদাবী হিসেবে ২১ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করে সাধারণ বীমা করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সাধারন বীমা করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক আব্দুল বারেক, সহকারী জেলনারেল ম্যানেজার শফিউল আজম খান, এনডিপির নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলাউদ্দিন খান সহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

    অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ