Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820
নিউজ ডেস্ক.
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মং নু গ্রামে বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলমানকে দেশটির সেনাবাহিনী পিটিয়ে, ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। সেইসঙ্গে নারীদের ওপর চালানো হয়েছে যৌন নির্যাতন। তবে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয়েছে তা বলতে পারেনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গত ২৭ আগস্ট এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘মং নু গ্রামে বার্মিজ (মিয়ানমারের অপর নাম) আর্মি মানবতা তথা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে ভয়াবহতা চালিয়েছে তা থেকে গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।’ মিয়ানমারের চলমান ইস্যুতে যারা উদ্বিগ্ন, ভয়ংকর এই অপরাধের বিরুদ্ধে তাদের আরো সোচ্চার হওয়া দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয় একটি আবাসিক কম্পাউন্ডে আশ্রয় নিলে তাদের ওপর সেনাবাহিনী ওই হত্যাকাণ্ড চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নতুন এ তথ্য উপস্থাপন করেছে এইচআরডব্লিউ। এর দুইদিন আগে দেশটির কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আমির (আরসা) সদস্যরা। এতে ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয় বলে দাবি মিয়ানমারের। ওইদিন মং নু (স্থানীয় নাম মনু পাড়া) ও পার্শ্ববর্তী হপং থ পিন (স্থানীয় নাম পন্ডু পাড়া) গ্রামে যে নৃশংসতা চালানো হয় স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে তা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে বোঝা যায়, গ্রাম দুটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাখাইনের গণহত্যার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা নিতে বিগত আট বছরের মধ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসে। কিন্তু কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা শেষ হয়।
হিউম্যান রাইট ওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে আবারো নিরাপত্তা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট দেশসমূহকে (যারা এ ব্যাপারে সোচ্চার) মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কিংবা সম্পদ বাজেয়াপ্তের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ব্যাপারে বেঁচে যাওয়া এবং মং নু ও অবরুদ্ধ চিন থা মার গ্রামের ১৪ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ওই প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার পরই তাদের মধ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যার আতঙ্ক কাজ করতে শুরু করে। আর এই আতঙ্ক থেকেই কয়েকশ রোহিঙ্গা মং নুর ওই আবাসিক কম্পাউন্ডে জড়ো হয়। এরপর বার্মার কিছু সেনা সদস্য ওই এলাকা ঘিরে ফেলে এবং কিছু সেনা ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর তারা বেশ কিছু রোহিঙ্গা পুরুষ ও বালককে বাইরে নিয়ে যায় এবং গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ছাড়া যারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদেরও হত্যা করা হয়। তারপর সেনারা লাশগুলো, কোনো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন একশ বা তার বেশি, তাদের গাড়িতে করে নিয়ে যায়।
বাহু ও পিঠে গুলি লাগা ১৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মাদ উসমান বলেন, তীব্র গুলির শব্দে তার ঘুম ভাঙে। যখন তাদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয় তখন তিনি ও গ্রামের অন্যরা পালাতে শুরু করেন। কিন্তু এতো অন্ধকার ছিল যে, কে গুলি করছে তা বোঝা যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা পালিয়ে অন্য গ্রামে চলে যাই। এ সময় বৃষ্টির মতো বুলেট পড়ছিল এবং আমার চারপাশে লোকজন লুটিয়ে পড়ছিল। হঠাৎ আমি বুঝতে পারি, আমার বাহু ও পিঠে কিছু আঘাত করেছে। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর জ্ঞান ফিরে দেখি আমি অন্যজনের বাড়িতে।’
মিয়ানমার সরকারের দাবি, তলোয়ার, আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ে শতাদিক বিদ্রোহী ওই হামলায় অংশ নেয়। এতে দুইজন পুলিশ অফিসার ও দুই বিদ্রোহী নিহত হয়। এ ছাড়া আরসার সদস্যরা আরো অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দেশটির দাবি। কিন্তু এইচআরডব্লিউ বলেছে, উত্তর রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় তারা সরকারের দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারেনি।
মোহাম্মাদ জুবায়ের নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী ও নৌকার মালিক বলেন, সেনাবাহিনীর গোলাগুলি বন্ধের পর সেনাবাহিনী একটি বড় নৌকা জব্দ করে নিয়ে যায়। ৫৬৪ ব্যাটালিয়নের স্টাফ সার্জেন্ট বাজু নৌকাটি জব্দ করে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর নৌকায় যেসব লাশ তোলা হয় তার বেশিরভাগই রোহিঙ্গা যুবকের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজু নামের ওই সেনা কর্মকর্তা ওই এলাকায় প্রায় ১৫ বছর ধরে থাকে এবং রোহিঙ্গাদের ভাষা আয়ত্ব করে। ঘটনার দিন সে ওই আবাসিক কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ভাষায় আশ্রয় নেওয়াদের বাইরে আসতে বলে এবং জানায় যে, তারা যদি বাইরে আসে তাহলে তাদের হত্যা করা হবে না।
প্রসঙ্গত, ২৫ আগস্ট চেকপোস্টে হামলার ঘটনার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধদের শুরু হওয়া নৃশংসতার শিকার হয়ে এ পর্যন্দ ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।