ক্রিমুখী দ্বন্দ্বে শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি.


কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের মল্লিকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষিকার ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

গত সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি মাত্র ঘর চেয়ার বেঞ্চে ঠাসা। বসবার কোন জায়গা নেই। পাশেই বেশকিছু টিন, লোহার জানালা-দরজা বালির নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। এসময় এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে জানান, বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ক্লাস হয়না। স্যারেরা বেলা বাড়লে এসে কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে যায়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে বিদ্যালয়টি যমুনার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। ভাঙনের ফলে ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত টিনসেড মেঝে পাকা ঘরটি ভেঙ্গে বর্তমান অবস্থানে এনে পাঠদান অব্যাহত রাখা হয়। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসরে গেলে সহকারি শিক্ষিকা নাজমুন নাহার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। এর কয়েকদিন পরেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। তড়িঘড়ি করে ওই কমিটির সদস্যগণ নিজেদের পছন্দের একটি কমিটির তালিকা অনুমোদনের জন্য প্রধান শিক্ষিকা নাজমুন নাহারের হাতে দেয়। কিন্ত ঐ তালিকা প্রধান শিক্ষিকার পছন্দের না হওয়ায় তিনি অনুমোদনের জন্য ওই তালিকা শিক্ষা অফিসে না পাঠিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এসময় তার প্ররোচনায় গ্রামবাসিদের পক্ষে আরও একটি তালিকা করা হয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থান নদীর নিকটে এবং ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া সেইচরে জনবসতি কম থাকায় শিক্ষার্থী সংখ্যাও অনেক কম। কারণে প্রধান শিক্ষিকা মাস দেড়েক আগে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য চেষ্টা করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও তার লোকজন তাতে বাধা দেয়।

এ বিষয়ে ওই ইউপি সদস্য জানান, প্রধান শিক্ষিকা দীর্ঘদিন কমিটি না করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয় ভবনের রড, এঙ্গেল বিক্রয় করেছেন। স্লীপের টাকাসহ যাবতীয় সরকারি অনুদান আত্মসাৎ করে আসছেন। তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে নিয়ে পাশ্ববর্তি ধুনট থানার এলাকার পাশ ঘেষে উঠানোর মতলব করলে গ্রামবাসিরা বাধা প্রদান করেছে।

প্রধান শিক্ষিকা নাজমুন্নাহার সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আগের ঘরের মালামাল বিক্রয় করে সব টাকা পরিচালনা কমিটিকে দেয়া হয়েছে। মূলত তারা আমাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য অপপ্রচার করছে।

কাজীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মঈনুল হাসান বিদ্যালয়টির সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কমিটি সহ নিজেদের মধ্যে সৃষ্ঠ কোন্দলে বিদ্যালয়টির এ অবস্থা হয়েছে। শিক্ষকগণ নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে বিধায় এ পর্যন্ত তাদের বেতন বন্ধ করা হয়নি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এদিকে একাধিক ছাত্র অভিবভাবকেরা সন্তানদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ