সিনেমা আসছে সউদি আরবে

নিউজ ডেস্ক.

সউদি আরব একদিন সিনেমা খুলে দেবে এবং একটি বিশ্বমানের অপেরা হাউস নির্মাণ করবে – বৃহস্পতিবার এমন কথা বললেন সউদি বিনোদন খাত সংস্কারের দায়িত্বে নিয়োজিত শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সউদি আরবে ১৯৭০ দশক পর্যন্ত কিছু সিনেমা দেখানো হতো। ওই সময় গোটা আরব দুনিয়ায় ধর্মের প্রভাব বাড়ছিল। এ অবস্থায় দেশটির আলেমরা সরকারকে বুঝিয়ে সিনেমা বন্ধ করতে সক্ষম হন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সউদি আরবে সিনেমা নিষিদ্ধ। আর এ বছর থেকে যদিও কনসার্ট আয়োজন শুরু হয়েছে, কিন্তু আলেমসমাজ তাকে ভালো চোখে দেখছেন না।
এদিকে সউদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স, দ্বিতীয় উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমান গত বছর যে ”ভিশন ২০৩০” ঘোষণা করেছেন, তাতে রয়েছে দেশটির সাংস্কৃতিক চালচিত্র পাল্টে দেয়ার অঙ্গীকার। সউদি সরকার মনে করে, এর মাধ্যমে যেমন কর্মসংস্থান হবে, তেমনি সউদিদের বদ্ধ জীবনধারায়ও আনা যাবে পরিবর্তন।
সউদি সরকার লক্ষ্য করেছে, প্রতি বছর অসংখ্য সউদি নাগরিক কাছের-দূরের দেশে গিয়ে নানারকম শো দেখে এবং বিনোদন পার্ক পরিদর্শন করে। তারা এভাবে বছরে আনুমানিক দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে থাকে। সউদি সরকার চায়, দেশে পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করে এই বিপুল অর্থের সিকি ভাগ যাতে দেশেই রেখে দেয়া যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সউদি আরবের জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির (জিইএ) চেয়ারম্যান আহমেদ আল-খতিব বলেন, যেসব রক্ষণশীল মানুষ সংস্কারের বিরোধিতা করছে, তারাও ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে যে, দেশের যুবসমাজ পরিবর্তন চায়।
আল-খতিব বলেন যে তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে এমন বিনোদনব্যবস্থা তৈরি করা, যার ৯৯% হবে ”লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে যা চলছে” তার মতো। তিনি অবশ্য এ বিষয়েও সতর্ক যে, যুগ যুগ ধরে রক্ষণশীল একটি সমাজব্যবস্থায় এসব খুব তাড়াতাড়ি করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, যুক্তিতে আমরাই জিতব। কারণ, কিছু সউদি উদার, কিছু রক্ষণশীল, আর বেশিরভাগই মধ্যপন্থী। এই মধ্যপন্থী মানুষগুলো ভ্রমণ করে, সিনেমা দেখে, কনসার্টে যায়। এরাই আমাদের জনসংখ্যার ৮০%।
আল-খতিব বলেন, রক্ষণশীলরা এসব দেখতে না চাইলে ঘরে বসে থাকলেই পারে!
সউদি আরবে বিনোদন খাত বিকাশে সরকারের এই প্রচেষ্টার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করছে অর্থনীতি। আয়ের প্রধান উৎস তেলের দাম বিশ্ববাজারে অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে এবং তরুণদের জন্য চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্থনীতির নতুন নতুন খাত খোলার কোনো বিকল্প নেই। তাই সরকার হাতে নিয়েছে এক উচ্চাভিলাষী সংস্কার কর্মসূচি।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সউদি সরকার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে দ্য বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপকে। তারা খুঁজে বের করবে সউদি আরবের কোথায় কোথায় পার্ক ও থিয়েটার বানানো যায়। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে সেগুলো নির্মাণ করা হবে।
আল-খতিব জানান যে তাঁর সংস্থাই গত মাত্র সাত মাসে ২০ হাজার চাকরি সৃষ্টি করেছে এবং ভিশন ২০৩০তে চলতি বছরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেয়া হয়েছে তাও ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তাঁর ধারণা, প্রতি বছর আট থেকে নয় শতাংশ করে বেড়ে ২০৩০ সাল নাগাদ বিনোদন খাতে সউদিদের ব্যয়ের পরিমাণ বর্তমানের তিন গুণ হয়ে যাবে।
সউদি আরবের সবচাইতে বড় অবসরবিনোদন প্রকল্পটি হচ্ছে রাজধানী রিয়াদের পাশে একটি বিনোদন নগরী প্রতিষ্ঠা। এতে থাকবে একাধিক রিসোর্ট, গলফ কোর্স, কার রেসের ট্র্যাক এবং একটি সিক্স ফ্ল্যাগ থিম পার্ক। এসব শুধু সউদিদের নয়, আশপাশের দেশের মানুষদেরও আকৃষ্ট করবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত কমিক বুক কনভেনশন ”কমিক-কন”-এর সাফল্যের কথা উল্লেখ করে আল-খতিব বলেন, আমাদের শুরুটা হয়েছে চমৎকার। সব ইভেন্টের টিকিটই বিক্রি হয়ে যায়। ১০ হাজার দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করে।
তিনি বলেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, এদেশের জনসংখ্যার বিরাট অংশ তরুণ।
অবশ্য কমিক-কন শুধু বিপুল দর্শকই আকর্ষণ করেনি, বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। কমিক-কনের ভিডিওতে নারীপুরুষ যুগল নৃত্যের দৃশ্য প্রকাশ হয়ে পড়লে এ বিতর্ক শুরু হয়। তবে আল-খতিব বলেন, সউদি আরব সবসময় এরকম রক্ষণশীল ছিল না, আর চিরকাল এরকম থাকবেও না। তবে এ জন্য দশকের পর দশকব্যাপী পরিচর্যা লাগবে।
তিনি বলেন, সউদি আরবে সিনেমা এখনই আসছে, তা নয়। তবে আসবেই আসবে। কিভাবে আসবে, আমি জানি। তবে কখন আসবে তা বলতে পারছি না। সূত্র : রয়টার্স ও সউদি গেজেট।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ