ক্ষমতাসীনরা টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবে -খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক.

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পালাবার সময় হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা (বিএনপি) অবশ্যই নির্বাচন চাই। নির্বাচনে আমরা যেতেও চাই। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। হাসিনার অধীনে এতদিন যতগুলো নির্বাচন দেখেছি সেগুলো সুষ্ঠু হয়নি। তাদের দলের সেক্রেটারি জেনারেলের (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যে তা জাতির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘একটা দলের সেক্রেটারি জেনারেল যা বলে তা থেকে বুঝে নেওয়া যায় তিনি তা বানিয়ে বানিয়ে বলছেন না, আর এমনি এমনি তো বলেছেনই না। তাই তাদের পালাবার সময় হয়ে গেছে। তারা এখন সম্পদ গুটাতে ব্যস্ত। কাজেই তারা পালাবার জন্য তৈরি হোক, আর আমরা জনগণের জন্য দেশে রক্ষার করার জন্য অধিকার রক্ষায় তৈরি হই। সেভাবেই তৈরি হতে হবে।’
২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরের এক প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, ওই সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ক্ষমতা বেশি দিন থাকে না। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। এটা ভালো নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকাপয়সা নিয়ে পালাতে হবে।
পয়লা মে শ্রমিক দিবস ও ২ মে শ্রমিক দলের ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সভায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের অনেকেই পাশ থেকে বলে দেয়, আপনারা কেন বসে আছেন? আপনারা কিছু একটা করেন। আমরা এই অবস্থা থেকে রক্ষা করেন। কিছু একটা করার সময় হয়নি। গণতন্ত্রের মাধ্যমেই দেশের মানুষের যে অধিকার আমরা ফিরিয়ে আনবো। সেই অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন সংগঠন।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের কাউন্সিলের মাধ্যমে মূল দল হয়েছে। অন্যান্য সংগঠনগুলোর পুর্নগঠিত হয়েছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল মহিলাদল হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় দল সংগঠিত হচ্ছে। মহানগর পুনর্গঠিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘‘পুলিশের সহায়তায় তারা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করছে। পুলিশ দিয়ে ভাবছে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। সেই জন্যই তারা বলতে চায় ‘আগামী নির্বাচনে যদি আমরা (আওয়ামী লীগ) কোনোভাবে না আসতে পারি। তাহলে কিন্তু আমরা খারাপভাবে যে পয়সা বানিয়েছি তা রক্ষা হবে না।’ তাহলে বুঝতে পারছেন দেশে মানুষের মধ্যে তাদের অবস্থান নেই।’’
তিনি বলেন, ‘সেই জন্যই নির্বাচন আমরা বারবার বলেছি এদের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। যতগুলো নির্বাচন হয়ে গেলে। কুমিল্লা নির্বাচন হয়ে গেলে সেখানে আমরা জিততাম ৫০ হাজার ভোটে সেখানে জিতেছে ১০ হাজার ভোটে। কত রকম চুরি করা হয়েছে।’
যতই আমাদের সংগঠনগুলো শক্তিশালী হবে ততই লুটেরাদের ভয় বাড়বে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘লুটেরাদের জনগণ ভোট দিবে না। ৫ জানুয়ারি ১৫৪টি চুরি করে নিয়ে ছিল। এবার সেটাও সম্ভব হবে না।কাজেই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে যারা জনগণের ভোটের নির্বাচন হয়ে আসে, আবার জনগণের ভোট দেবে সেটা মাথা রেখে কাজ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে পুলিশ বাহিনী আছে, তাদের দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো্। গুম, হত্যা, খুন ১০ বছর ধরে এই কাজ করছে। এগুলো প্রতিটির হিসেবে আছে। যারা আপন জন হারিয়ে তাদের মনে আছে।’
পুলিশ নির্দেশে বাধ্য হয়ে এ কাজগুলো করছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি প্রধান। বলেন, ‘পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যায়, গুম করে ফেলে, এটা গণহারে সব পুলিশের দোষ না। সরকার তাদের নির্দেশ দেয় বলেই তারা এসব কাজ করে। আমরা ক্ষমতায় এলে, পুলিশকে এসব কাজে ব্যবহার করবো না।’
বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধার্পণ করতে হাজারও নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে। এটাই প্রমাণ করে বিএনপির জনপ্রিয়তা কতটা। একারণেই সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। বিএনপিকে সমাবেশ করতে বাধা দেয়।’
খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে, বন্যা কবলিত হাওর অঞ্চলকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা না করায় সরকারের সমালোচনাও করেন।
শ্রমিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকলকে সাথে নিয়ে, দরকারে হলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে হবে। শুধু ঢাকাতে নয় সারাদেশে শ্রমিক দলকে সুসংগঠিত করতে হবে।’
এসময় আরও বক্তব্য দেন– বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম, শ্রমিক দল নেতা সালাহ উদ্দিন সরকার, আবুল খায়ের খাজা, মো. আবুল হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কাজী আমীর খসরু, মহানগর উত্তরের সভাপতি জুলফিকার মতিন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বাদল, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম রাজা প্রমুখ।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ