আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ.
বগুড়ার ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ তারেক হেলালকে দল থেকে বহিস্কারের গুঞ্জন চলছে। আজ রবিবার ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্য-নির্বাহির কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। একারনে রবিবার সকাল থেকে ধুনট বাজারে বিক্ষোভ শুরু করে এমএ তারেক হেলালের কর্মী-সমর্থকরা। ওই বিক্ষোভে এমএ তারেক হেলাল নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ধুনট পৌরসভা নির্বাচনের পর থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে সাময়িক ভাবে বহিস্কার করা হয়। তাঁদের স্থায়ী বহিস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠায় উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে আওয়ামী লীগে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। বিভক্ত আওয়ামী লীগে উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিপরীত পক্ষে অবস্থান নেন এমএ তারেক হেলাল। ওই পক্ষের বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কড়া সমালোচনা করেন হেলাল। বিষয়টি সংগঠন পরিপন্থী হওয়ায় তাঁকে কারন দর্শানোর নোটীশ দেওয়া হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত নোটীশটি ৯ সেপ্টেম্বর গ্রহন করেন এমএ তারেক হেলাল। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডাক বিভাগের মাধ্যমে নোটীশের জবাব দিয়েছেন এমএ তারেক হেলাল। কিন্তু এরইমধ্যে দল থেকে বহিস্কৃত হচ্ছেন এমএ তারেক হেলাল, এমন গুঞ্জন শুরু হয়।
আজ রবিবার ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহি কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। কথিত রয়েছে, ওই সভায় এমএ তারেক হেলালের বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একারনে রবিবার সকাল থেকে এমএ তারেক হেলাল তাঁর নেতাকর্মীদের নিয়ে ধুনট বাজারে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাসার দিকে যাওয়ার সময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকায় পুলিশ বাঁধা দেয়। সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে বিক্ষুব্দ নেতাকর্মী বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সোয়া ১১টায় উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মিলন বিক্ষোভকারীদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এসময় বিক্ষোভকারীরা তাঁর উপর হামলার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের তৎপরতায় সেখানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এরপর বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সড়িয়ে দেওয়া হলে তারা ধুনট মুজিব চত্বরে অবস্থান নেন। বিষয়টি নিয়ে ধুনট বাজারে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে এমএ তারেক হেলাল ধুনট বার্তাকে বলেন, কারন দর্শানোর নোটীশে বলা হয় সংগঠন পরিপন্থী বক্তব্য দিয়েছি। প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার পরপরই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গ্রামের বাড়িতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। কারা তাদের হত্যা করেছে ? ঘটনাটি আমারও জানা ছিলো না। নতুন প্রজন্মের এই ইতিহাস জানা প্রয়োজন বলেছি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে থানা ও আদালতে চাকুরী দেবার নামে অর্থ হাতিয়ে নেবার প্রতারণার বেশ কয়েকটি অভিযোগ হয়েছে। বিষয়টি ধারাবাহিক ভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাঁকে সংশোধন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
এমএ তারেক হেলাল বলেন, নোটীশের জবাব দিয়েছি। প্রকৃত পক্ষ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়। আমি যেন সম্মেলনে প্রার্থী হতে না পারি, একারনে দল থেকে বহিস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে বহিস্কার চেষ্টার প্রতিবাদে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছেন।
ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন ধুনট বার্তাকে বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছেন এমএ তারেক হেলাল। এছাড়াও সংগঠন পরিপন্থী বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সে জড়িত। একারনে তাকে কারন দর্শানোর নোটীশ দেওয়া হয়। আজ রবিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহি সভা রয়েছে। এসব বিষয়ে কার্য নির্বাহি কমিটি সিদ্ধান্ত নেবেন।
ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ধুনট বার্তাকে বলেন আওয়ামী লীগের একটি মিটিং এর খবর শুনে অপর একটি গ্রুপ বিক্ষোভ করে। এ ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।