আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতীয় ‘গুপ্তচরের’ ফাঁসি স্থগিত

নিউজ ডেস্ক.

দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আইসিজে আজ পাকিস্তানকে নির্দেশ দিয়েছে, ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে ধৃত কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড যেন তারা চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে কার্যকর না করে।
জাতিসংঘের ওই আদালতে দুই দেশের সওয়াল জবাবের পরই আজ বিচারপতিরা সর্বসম্মতভাবে পাকিস্তানে মি যাদবের ফাঁসির ওপর এই স্থগিতাদেশ জারি করেছেন, যেটাকে ভারত প্রথম রাউন্ডে তাদের বিজয় বলে দাবি করেছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক আদালত স্থগিতাদেশ দেয়ায় ভারতীয় নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ একে ‘যাদব পরিবার ও ভারতবাসীর জন্য বড় স্বস্তি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার হেগের আন্তর্জাতিক আদালত কুলভূষণ যাদবের প্রাণদণ্ডের আদেশে স্থগিতাদেশ দেয়। ওই ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ফোন করে সন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি ওই মামলার আইনজীবী হরিশ সালভে ও তার টিমের প্রশংসা করেন।
ভারতের পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান নেয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আইনজীবী হরিশ সালভের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার বিশেষ প্রশংসা করেছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কইয়া নাইডূ বলেছেন, কুলভূষণ মামলায় ভারতের জন্য বড় জয়। আন্তর্জাতিক আদালত ভারতকে কনসুলার অ্যাকসেস দেয়ার দাবি গ্রহণ করেছে। প্রাণদণ্ডের সাজা স্থগিত করেছে। এতে ন্যায় বিচার মজবুত হয়েছে।
আজ আন্তর্জাতিক আদালতের প্রেসিডেন্ট জাস্টিস রনি আব্রাহাম ঘোষণা করেছেন, কুলভূষণ যাদবকে এখন ফাঁসি দেয়া যাবে না। কুলভূষণ যাদব আদৌ দোষী কী না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কুলভূষণের বিরুদ্ধে যেন কোনো পদক্ষেপ করা না হয় তা পাকিস্তানকে নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ করা হয়েছিল, কুলভূষণ যাদবকে কনসুলার অ্যাকসেস থেকে বঞ্চিত করেছে পাকিস্তান। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালত বলেছে, ভিয়েনা কনভেশনের শর্ত অনুযায়ী কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের।
গত সোমবার ওই মামলার শুনানির সময় পাকিস্তান দাবি করেছিল, এ নিয়ে মামলা চালানোর এখতিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতের নেই। একজন গুপ্তচরের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিয়েছে সামরিক আদালত।
পাকিস্তানের দাবি, কুলভূষণকে গ্রেফতারের সঙ্গে পাকিস্তানের জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িত। সুতরাং, এখানে ভিয়েনা কনভেনশনের প্রোটোকল প্রযোজ্য নয়। কুলভূষণকে বেলুচিস্তান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেখানে পাকিস্তানের মাটিতে তিনি গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছিলেন।
আজ আন্তর্জাতিক আদালতের প্রেসিডেন্ট জাস্টিস রনি আব্রাহাম পাকিস্তানের ওই দাবি খারিজ করে বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কুলভূষণ যাদবের মামলায় হস্তক্ষেপ করতে পারে আন্তর্জাতিক আদালত।
পাকিস্তানের হাতে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদবের জীবন বাঁচাতে, ভারত আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়।
গত বছর ৩ মার্চ কুলভূষণ যাদবকে বেলুচিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করেছিল পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। গত ১০ এপ্রিল তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় পাক সামরিক আদালত। পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মী কুলভূষণ ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর হয়ে কাজ করছিলেন। ইরান থেকে তিনি পাকিস্তানে ঢুকেছিলেন।
ভারত ওই দাবি খারিজ করে জানায় কুলভূষণকে ইরান থেকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি সেখানে ব্যবসা করছিলেন।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, কুলভূষণ নৌবাহিনীতে কাজ করলেও তার সঙ্গে সরকারের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবসর নিয়েছিলেন।
গতবছর ২৫ মার্চ থেকে চলতি বছর ৩১ মার্চের মধ্যে মোট ১৩ বার ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে কুলভূষণকে আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান তাতে কর্ণপাত করেনি। পরবর্তীতে ভারত আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়।

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ