ধুনটে নদীর পানি ডিঙ্গিয়ে বিদ্যালয়ে যায় শিক্ষার্থীরা


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820
আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ. 

এক হাতে বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই উঁচিয়ে ধরেছে শিশুটি। অন্যহাত চাচার মাথায় রেখে নিজের ভর নিয়ন্ত্রণ করছে আলী বাবা। ৫ বছর বয়সী এ শিশু প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অবশ্য কাঁধে নেওয়া ভাতিজাকে শক্ত করে এক হাতে ধরে ব্যালান্স তৈরী করছেন কৃষক আমজাদ হোসেন। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পা ফেলে পার হচ্ছেন ইছামতি নদী। নদীর পানি পারি দেওয়ার এ চিত্র বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাদারভিটা গ্রামের।
সবুজ ছায়া ঘেরা গ্রাম মাদারভিটা। উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের এ গ্রামের বুকজুড়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। নদীর সাথে এ গ্রামের মানুষের এক নিবিড় সম্পর্ক। তবে নদীটি গ্রামকে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। উপজেলা সদরের সাথে নদীর পশ্চিম তীরের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। নদী পারপারে সেতু, সাঁকো বা নৌকা না থাকায় পূর্ব তীরের সাথে কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ফলে নদীর পানিতে ভিজেই পারাপার হতে হয় এলাকাবাসীকে। এদিকে নদীর পশ্চিম তীরে রয়েছে মাদারভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পারধুনট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য ওই নদী পারাপার হতে হয়ে পূর্ব তীরের মানুষকে।

    শিশু আলী বাবা মাদারভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সরকারের দেওয়া নতুন বইয়ের ঘ্রাণ তাকে বিদ্যালয়ে যেতে উৎসাহিত করে। কিন্তু নদীর পানি ডিঙ্গিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া তার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। পরিবারের সদস্যরা কাঁধে নিয়ে নদী পার করে দিলেই বিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় আলী বাবা। রোববার তাকে চাচা আমজাদ হোসেন কাঁধে নিয়ে ইছামতি নদী পার করে দেন।
    মাদারভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া খাতুন, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজিবুল ইসলাম, রিয়াদ হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের পাঠ্যবই উঁচিয়ে বুক পানি ভিজে ইছামতি নদী পার হতে দেখা যায়। বিদ্যালয় খোলা থাকলেই নদী পারাপারের এ দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া নদী পারাপারে ওই গ্রামের মানুষের জরুরী চিকিৎসা ও কৃষকের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এদিকে ধুনট উপজেলা সদরের সাথে ধুনট ও কাজীপুর উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষের দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নদীর দু’পাশে সড়ক রয়েছে। কাজীরপুর উপজেলার পারুলকান্দি গ্রাম হয়ে নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত কাঁচা সড়ক রয়েছে। নদীর উপর সেতু নির্মাণহলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পূর্ব তীরের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন হবে।
    মাদারভিটা গ্রামের কৃষক হাসেন আলী বলেন, গ্রামটাকে দু’ভাগ করে রেখেছে ইছামতি নদী। এ নদীর উপর সেতু নির্মাণহলে গ্রামের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে এলাকার শিশুদের শিক্ষা অর্জনে এ সেতু অন্যতম ভূমিকা রাখবে। পানি ডিঙ্গিয়ে নদীর পারপারের ভয়ে অনেকে সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। যুগ যুগ ধরে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও আজো এ সেতু নির্মাণ হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে হাসেন আলী বলেন, ২০১২ সাল থেকে গ্রামবাসীর পক্ষে সেতুর দাবীতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, জনপ্রতিনিধিদের নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছি। অনেক তদবির করেও আজো কোন সুসংবাদ ভাগ্যে জোটেনি।
    উপসহকারী প্রকৌশলী আবু তালিম হোসেন বলেন, মাদারভিটা গ্রামে ইছামতি নদীর উপর ১০০ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেছি। একটি বিশেষ প্রকল্পে ওই সেতুর অর্থ বরাদ্দের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি, অর্থ বরাদ্দ হলে মাদারভিটা গ্রামবাসীর এবং শিক্ষার্থীদের নদী পারাপারের দুঃখ ঘুচবে।

    অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ