শেরপুরে তৈরী টুপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক বাজারে!


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820

আবু জাহের. শেরপুর (বগুড়া) থেকে



    মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাবার প্রিয় বাহারি রঙ্গে পঞ্জাবি টুপি। তারই মধ্যে এখন রমজান মাস। এ মাসে মুসলমানরা কমবেশি সবাই মসজিদে নামাজ পড়ে, তাই বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে টুপি বিক্রি হয় অধিক। এ ছাড়াও সামনেই আসছে ঈদ, পাঞ্জাবীর পাশাপাশী অবশ্যই টুপি চাই। আর এই সুযোগে টুপি দোকানদারদের পাশাপাশি গ্রাম্যবধূরাও থেমে নেই। টুপি তৈরীতে এখন চরম ব্যস্ত সময় পার করছে। গ্রাম্যবধুদের তৈরী এই সকল টুপি দেশের বাজরে চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম কুড়িয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে রপ্তানী হচ্ছে শেরপুরের তৈরিকৃত টুপি। আর এই সকল টুপি বগুড়া জেলার শেরপুর ও ধুনটের প্রায় ৫০০ টি গ্রামে তৈরী হচ্ছে। গ্রামের বধুরা ঘরের কাজ শেষ করে অবসর সময়ে নানা সুখ-দুঃখের আলাপচারিতা আর জমানো গল্পের আসরেই চলে তাদের রকমারি হাতের কাজ। ওদেরই নিপুন হাতের ছোঁয়া আর সুতা ও ক্রুশ কাটা এই দু’য়ের মিলিত বন্ধনেই তৈরী হচ্ছে রং-বে-রংয়ের রকমারি টুপি। ওইসব রকমারি টুপি দেশের সীমানা পেরিয়ে আজ সূদুরসৌদি আরব, পাকিস্থান, দুবাই, কাতার, ভারত সহ মুসলিম সকল দেশেও যাচ্ছে। যা থেকে বিপুল পরিমান বৈদেশিক অর্থ আয় হচ্ছে। সেই সাথে ওদের ভাগ্যের সঙ্গে দেশীয় অর্থনীতির চাকাও বেশ জোরোসোরেই ঘুরতে শুরু করেছে।

    জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরের চকধলী, জয়লা-জুয়ান, জয়লা-আলাদি, কল্যাণী, চক-কল্যাণী ও গুয়াগাছী এবং ধুনটের বোহালগাছা, চৌকিবাড়ি, ফড়িংহাটা, কুড়হা-হাটা, বিশ্বহরিগাছা, চাঁনদার, ভূবনগাতি, চালাপাড়া, পাঁচথুপি, থেউকান্দি ও বাটিকাবাড়ি । ব্যাপরী জুয়েল আখন ধুনট বার্তাকে জানান, ২ লক্ষ নারী এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারো ঈদকে সামনে রেখে এ পেশায় আরো কয়েক হাজার নারী-পুরুষের আগমন ঘটেছে।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে ওইসব গ্রামে টুপি বুনোনের কাজ শুরু হয়। বোহালগাছা গ্রামের কুলসুম বিবি, টুবলি, হ্যাপি, রানা, শিরিন আকতার জানান, তারা জন্মের পর থেকেই নিজেকে টুপি বানানোর পেশার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তাদের মতে, বাড়িতে কর্মহীন হয়ে বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করাই ভাল। এমন ভাবনা এবং বংশীয় ঐতিহ্যকে ধারন করতেই অনেকেই টুপি তৈরীর শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। বিথি, সাবিনা ইয়াসমিন, সুর্বনা ও শিউলি জানান, তারা স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরী করে থাকেন। এছাড়া গ্রামের গৃহবধূরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে টুপি বানিয়ে থাকেন। তা থেকে আয়ও মন্দ হয়না। বিশেষ করে রমজানে গ্রামে গ্রামে টুপি তৈরীর হিড়িক পড়ে যায়। সবকিছু বাদ দিয়ে গৃহবধূরা টুপি তৈরীর কাজ করেন। এ সময় বাড়ির অন্যান্যরাও বাদ থাকেন না। তারা কোন না কোন ভাবে ওই কাজে সহযোগিতা করেন। তারা জানান, বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সূতো দিয়ে আসেন। পরে সূতোর দাম কেটে রেখে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে টুপি কেনেন।

    ব্যাপারী মোঃ জুয়েল আখন ধুনট বার্তাকে জানান, ঠিকমত কাজ করলে দিনে ৩/৪টি টুপি বুনোনো সম্ভব। ৭০ টাকা দামের এক ববিন সূতা দিয়ে ১২টি টুপি তৈরী করে যার দাম ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ব্যাপারীরা বাড়িতে গিয়ে সূতার ববিন দিয়ে আসেন এবং টুপি তৈরী শেষ হলে নিজেরাই খরিদ করে থাকেন। ওইসব রকমারি টুপি তারা সৌদি আরব, পাকিস্থান, দুবাই, কাতার, ভারত সহ মুসলিম সকল রাষ্ট্রে পর্যায় ক্রমে বিক্রি হয়। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সেসার্স জুয়েল ক্যাপ ডিপো, সত্বাধীকারী জুয়েল আখন জানান, সরকার যেমন গারমেন্স শিল্পকে রপ্তানিতে যে ভুর্তুকি প্রদান করে তেমই ভাবে জালি টুপিতে ভুর্তিকি দেওয়া যায় তহলে এই শিল্পের আকার আরো সুদুর প্রসার হবে বলে আশা করেন। তারা স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই সব সময় কম-বেশি পূঁজির অভাব লেগেই আছে। তাছাড়া সব কিছুর দামও বাড়তি। এ অবস্থায় যথেষ্ট পূঁজির ব্যবস্থা করা গেলে টুপি শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটানো সম্ভব বলে তারা মনে করেন।

    অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ