ভারতে ‘গোরক্ষা’য় বিপাকে কৃষকরা

নিউজ ডেস্ক.



নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে গোমাংস নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু হয়। একদিকে গোমাংস রাখার অভিযোগে একের পর এক পিটিয়ে খুন। অন্যদিকে, গোমাংসে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা টানার চেষ্টা। গবাদিপশু জবাইয়ের উদ্দেশ্যে কেনাবেচা করা যাবে না বলে নিয়মও জারি করেছিল দেশটির সরকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

এবার খোদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেই সতর্কবার্তা দেয়া হলো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শনিবার যে আর্থিক সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে সুকৌশলে বলা হয়, গবাদিপশু জবাইয়ে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা টানা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরাই।

এতদিন এ আশঙ্কার কথা বলছিল কৃষক সংগঠনগুলো। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল কৃষক, পশুপালনকারী, মাংস রফতানি ও চর্ম শিল্পমহল থেকে। তাতে সহমত জানিয়েছিলেন অর্থনীতিবিদরাও।

অবশ্য, সমীক্ষার কোথাও সরাসরি গবাদি পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা বা গোরক্ষক কমিটির উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়, কর্মক্ষমতা হারানোর পর গবাদি পশুর দামের ওপরও পশুপালকদের রুটিরুজি নির্ভর করে। এমনিতেই কৃষি থেকে আয় কমছে। কোনো ‘সামাজিক নীতি’র জেরে পশুর মাংস বেচে আয় বন্ধ হলে এবং বুড়িয়ে যাওয়া গবাদি পশুকে বসিয়ে খাওয়াতে হলে, চাষি-পশুপালনকারীদের আয় আরো কমবে। এসব ‘সামাজিক নীতির’ ফলে সমাজে ক্ষতিই হবে।

আর্থিক সমীক্ষাটি তৈরি করেন অর্থ মন্ত্রণারয়ের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তা সংসদে পেশ করেছেন। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই ‘সামাজিক নীতি’ কি গবাদি পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা? তার জবাব, ‘এসব প্রশ্ন করে আমাকে বিপদে ফেলবেন না।’

আর্থিক সমীক্ষায় গো-জবাই রদ ঘিরে বিপদের কথা উল্লেখ করায় অনেকেরই বক্তব্য, সঙ্ঘ-পরিবারের উগ্রহিন্দুত্ব নিয়ে মোদি সরকারের মধ্যেই আপত্তি রয়েছে।

সিপিএমের কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লার যুক্তি, ‘কৃষকদের আয়ের ৭০ ভাগ আসে জমি থেকে। বাকিটা পশুপালন থেকে। চাষের ক্ষতি সামলাতে না পেরে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। দুধ দেয়া বা মাঠে হাল টানা বন্ধের পর গরু-মোষ পুষতে হলে তার লালনপালনের খরচ কোথা থেকে আসবে।’

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বিকাশ রাওয়ালের বক্তব্য, বছরে তিন কোটি সাত লাখ পুরুষ গরু-মোষ জন্ম হয়। জবাই বন্ধ হলে এদের খাবারের পেছনে বছরে পাঁচ লাখ চার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। রাওয়ালের প্রশ্ন, এই আর্থিক দায়ভার কি সরকার বইতে রাজি। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

অনুমতি ব্যতিত কপি করা থেকে বিরত থাকুন। -ধুনট বার্তা কর্তৃপক্ষ