Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/dhunatbarta.net/public_html/wp-content/plugins/social-share-with-floating-bar/social-share-with-floating-bar.php on line 820
নিউজ ডেস্ক.
রাজনীতি করতে চাইলে বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতির মাঠে আসতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রনাথ কুমার সিনহাকে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির শোক দিবসের আলোচনা সভায় এই আহ্বান জানান তিনি।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, একজন বিচারপতি হয়ে বিচারালয়ে বসে এত কথা বলার কী প্রয়োজন? আপনি যদি রাজনীতি করতে চান বিচারালয় ছেড়ে এসে রাজনীতির মাঠে নামুন, কথা বলুন, জনগণ শুনবে। সাংবিধানিক ওই পদে থেকে আপনি রাজনৈতিক কথা বলতে পারেন না। আর বলা মানেই সংবিধানের শপথ ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হন আপনি।
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির একটি বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা দেখলাম গতকাল আপনি একটা কথা বলেছেন। আপনি বলেছেন যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে সুপ্রিম কোর্ট ইয়ে করে দিয়েছে। ইয়ে করে দিয়েছে মানে? ইয়ে করে দিয়েছে ওখানে তো কিছু হয়নি, অবাক হয়নি। ইয়ে মানেটা কী, মানে অযোগ্য করে দিয়েছে। কী কারণে আপনি পাকিস্তানের রেফারেন্স টানছেন, কোন উদ্দেশ্যে আপনি কথা বলছেন? আপনি তো পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের চেয়ারে বসেননি। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এটা পাকিস্তান নয়, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, যদি পাকিস্তানের চিন্তা চেতনা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, তাহলে সেটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের কোনো অশুভ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেবে না। আপনি ইয়ে করতে চান, আপনারা নিজেরা ইয়ে হয়ে যাবেন।
সুপ্রিম কোর্টের কতিপয় বিচারকের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আদালতের মাধ্যমে সেই ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আদালতে যারা বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন, যে কোনো রাগ অনুরাগ, অনুকম্পা বা কোনো ধরনের ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে কখনো রায় প্রদান করবেন না। সেটা আপনাদের সাংবিধানিক শপথ। আজকে গুটিকয়েক বিচারপতির কর্মকাণ্ডে, তাদের কথা বার্তায় পুরো বিচার বিভাগ বিব্রত।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করায় প্রধান বিচারপতির কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা অবাক হয়ে যাই, ’৭১ এ আমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশে স্বাধীন করেছিলাম, আপনারা কথায় কথায় তাদের রেফারেন্স টানেন। আমরা দেখলাম ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন এবং জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করলেন। শুধুমাত্র পাকিস্তান ছাড়া এই উপমহাদেশসহ সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এটি নেই। আপনারা সেটাই পছন্দ করলেন। এই বাংলাদেশে পাকিস্তানের এজেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে জনগণের ক্ষমতা হরণ করে সংসদ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। আর আপনিও এখন পাকিস্তান প্রীতি অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল গঠন করলেন।
সাংবিধানিক পদ ধারণকারী ব্যক্তিদের রাজনৈতিক বক্তব্য না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে হানিফ বলেন, যারা বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে আছেন, তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আপনারা সাংবিধানিক পদে থেকে কোনো রকম বিতর্কমূলক কথাবার্তা বলে জনগণের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না, বিতর্কিত হবেন না। সাংবিধানিক পদটাকে বিতর্কিত করবেন বাংলাদেশ সেটা দেখতে চায় না। আপনাদের অতীত এই বাংলাদেশ আগেও দেখেছে। আপনাদের দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। আপনাদের ভলো কাজ যেমন আছে, তেমনি আপনাদের ব্যর্থতাও আছে, সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করতে আদালত ব্যর্থ হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আপনারা বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আটজন বিচারপতি বিব্রতবোধ করে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এ কথাও বাংলাদেশের মানুষ জানে। এই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য তৎকালীন সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল বিচারপতি জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে। সেই তদন্ত কমিশনের রিপোর্টও বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। উনি কিভাবে মিথ্যাচার করেছেন সেটাও মানুষ দেখেছে।
তিনি আরো বলেন, আজকে সেই বিচারপতির বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত হয় আপনি সাংবিধানিক পদে থেকে চিঠি দিয়ে তদন্তের নিষেধাজ্ঞা করেন। এইটা কোন ধরনের নৈতিকতা বহন করে? সাংবিধানিক পদে থেকে এমন অনৈতিক কাজ বাংলাদেশের মানুষ আর দেখতে চায় না। এই দেশে এই ধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে, যা বিচার বিভাগকে জনগণের কাছে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে এসেছে। বিচার বিভাগ থেকে রাজনৈতিক কথাবর্তা বলে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি হোক, আমরা চাই না।
’৭১-এর হত্যাকাণ্ড, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং ২১ আগস্টের বোমা হামলা একই সূত্রে গাথা দাবি করে তিনি বলেন, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যারা স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ফেডারেল রাষ্ট্র বানানোর জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারাই নেপথ্যে থেকে জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। শুধু ২১ আগস্টে নয়, ১৯ বার হামলা করা হয়েছিল আমাদের নেত্রীকে হত্যার জন্য। আল্লাহর রহমতে তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। আমরা বলেছিলাম এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সুষ্ঠুভাবে করা হোক। যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের সরকারিভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি সরাসরি জড়িত ছিল।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদার বিচারের দাবি করে হানিফ বলেন, হত্যার জন্য সরকার প্রধান হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া দায় এড়াতে পারে না। বিশেষ করে তার পুত্র তারেক রহমান মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। সেই হত্যাকারীদের বিচার এখনো হয়নি। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং ধৃত আসামিদের স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে এই ঘটনা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় করা হয়েছিল। এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল হাওয়া ভবনে পরিকল্পনা করে। হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা যেমন জড়িত, তেমনি পার্লামেন্টে দাড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন তিনিও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। সেই কারণে তারও বিচার করা হোক।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক জুলফিকার রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. জিল্লুর রহমান ভূইয়ার সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ডাবলু প্রমুখ।